বিয়ে করে নাকি জাত গেছে। এ কারণে মেয়েটিকে দেয়া হয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
তার গায়ে মদ ছিটিয়ে করা হয়েছে ‘পবিত্র’। বাধ্য করা হয়েছে জরিমানা দিতে। পাশাপাশি মাতববরসহ ‘সমাজের’ সবাইকে খাওয়াতে হয়েছে পরিবারটিকে।
ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ি এলাকায়।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে অভিযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন নামে একটি সংগঠনের চুয়াডাঙ্গা শাখার নেতারা।
এতে জানানো হয়, দুই মাস আগে ডোম সম্প্রদায়ের একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় বাশফোঁড় সম্প্রদায়ের মেয়েটির।
কিন্তু বিয়ে মানতে নারাজ ডোম সম্প্রদায়ের সমাজপতিরা। তাদের কাছে এটি রীতিমতো অপরাধ। এই বিয়েতে ‘জাত গেছে’ ডোম সম্প্রদায়ের।
তাই বসানো হয় বিচার সভা।
ছেলেটির পরিবারকে একঘরে করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ২৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের মাছের আড়তপট্টি এলাকায় বিচার বসান রতন, দুখু, চলুয়া, ভুটকা, বাদল হিরু ডোমসহ বেশ কয়েকজন।
বিচারে মেয়েটিকে তার সম্প্রদায় থেকে ডোম সমাজে রূপান্তরিত করে ‘পবিত্র করার’ নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী, ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষের সামনে রিতার শরীরে মদ ছেটানো হয়।
এরপর ছেলেটির পরিবারকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ২০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সকল ডোম সম্প্রদায়ের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
বলা হয়, মেয়েটি বাবার বাড়ি গেলে কোনো খাবার খেতে পারবে না।
ভুক্তভোগী মেয়েটি জানান, সমাজপতিদের নানা হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিনি। পবিত্রতার কথা বলে প্রকাশ্যে তার শরীরে ছেটানো হয়েছে বাংলা মদ। একঘরে করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে চালানো হয়েছে মানসিক নির্যাতন। তারা খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাছের আড়ত পট্টির সামনে মানববন্ধন করে জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন চুয়াডাঙ্গা শাখা।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবি জহির রায়হান বলেন, ‘সভ্য সমাজে জাতে তোলার অজুহাতে নববধূ এবং তার পরিবারের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা আইনবহির্ভূত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ঘটনাটি সব নারীর জন্য অবমাননাকর এবং লজ্জার।
মানববন্ধনের পর বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান নিউজবাংলাকে জানান, ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছিল। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’