পুলিশ হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রাহয়ান আহমদ। রায়হানকে পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এই মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।তবে সাড়ে ৫ মাস পরও এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। যদিও অভিযোগপত্র প্রস্তুতের কথা জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে। গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১২ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের লাশ পাওয়া যায়।রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, টাকার দাবিতে রায়হানকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। ভোরে রায়হানের চাচা টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এরআগেই মারা যান রায়হান। ১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সিলেটের কোতয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তিন্নি।পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানায়, এই মামলার তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সঙ্গে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি (সেকেন্ড ইনচার্জ) এসআই হাসান আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হবে।পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছি। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’
পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন
রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অভিযোগপত্র দিতে নির্দেশ দেন আদালত। তবে এই সময়ে তদন্ত শেষ না হওয়ায় সময় বর্ধিত করার জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করে পিবিআই। ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করে।পিবিআই সূত্রে জানা যায়, রায়হানের মৃত্যুর ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ছয়জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস।গ্রেপ্তারের পর তাদের সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত এসআই আকবরকে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।অভিযোগপত্রে গ্রেপ্তার ছয় পুলিশ সদস্যকেই আসামি করা হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পিবিআই পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান।এ ছাড়া রায়হানের মৃত্যুর পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তা করায় কথিত সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।পুলিশ সুপার বলেন, এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে তাদেরকে আসামি করা হবে।তিনি বলেন, অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামিদের ব্যাপারে জানানো হবে। দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাসেও রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, পিবিআই বারবার বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। কিন্তু তাদের দ্রুত সময় আর আসছে না।তিনি বলেন, প্রধান অভিযুক্ত আকবর কেন রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে গেলো, সে কাদের প্রশ্রয়ে ভারতে পালিয়ে গেল, কারা হত্যার পর রায়হানকে ছিনতাইকারী ও গণপিটুনিতে মারা গেছে বলে প্রচারণা চালাল এসব অভিযোগপত্রে না আসলে তা হবে অসম্পূর্ণ।