তার নাম তানিয়া আক্তার। নিজের ও কন্যাসন্তানের পেট চালানোর জন্য ভিক্ষাই ছিল তার পেশা। বরিশাল লঞ্চঘাট, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কেডিসি ও চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতেন। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ছিল না। যেখানে রাত হতো সেখানেই ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি দুই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে।
সেই তানিয়াকে ব্যবসার উপকরণ দিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে তানিয়াকে এই সহায়তা দেয়া হয়। ব্যবসার উপকরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে একটি চায়ের ফ্লাস্ক, চা পাতা, চিনি, পান-সুপারি, সিগারেট ইত্যাদি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তানিয়া আক্তার বরগুনার আমতলী উপজেলার উলাতলার গ্রামের প্যাদাবাড়ির জাফর মিয়ার মেয়ে। চার বছর আগে তার বিয়ে হয় একজন রংমিস্ত্রির সঙ্গে। বিয়ের দুই বছর পর তাদের একটি কন্যাসন্তান হয়।
এদিকে দুই বছর আগে তানিয়া আক্তারের মা রাবেয়া তানিয়ার শ্বশুর দীন মোহাম্মদকে বিয়ে করেন। এরই জের ধরে তানিয়ার স্বামী আব্দুল তাকে ফেলে চলে যান। তখন মারাত্মক টাকাপয়সার অভাবে পড়ে যান তানিয়া। উপায় না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করা শুরু করেন তিনি ।
একদিন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার একটি অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে তানিয়া তার কাছে ভিক্ষা চান। তখন জেলা প্রশাসক তার বিষয়ে খোঁজখবর করেন। এরপর তিনি তানিয়াকে সহfয়তা করার এই উদ্যোগ নেন।
তানিয়া আক্তার (২৪) জানান, ১০ হাজার টাকা দামের চায়ের ফ্লাস্ক, চাপাতা, চিনি, পান-সিগারেট দেয়া হয়েছে তাকে। এগুলো বিক্রি করে দুই বছরের মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দিন কাটাবেন তিনি। তার স্বামী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে থাকেন। তবে দুই বছর ধরে স্ত্রী বা মেয়ের কোনো খোঁজ রাখছেন না তিনি।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ জানান, তানিয়ার মেয়ের বয়স মাত্র দুই বছর। এত ছোট বাচ্চা তার মা ছাড়া থাকতে পারবে না, তাই তাকে শিশু সদনে রাখা যাবে না। মা এবং মেয়েকে নিরাপদ বাসস্থান দেয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসক বিবেচনা করছেন।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানান, একজন তরুণীর এভাবে ফুটপাতে ঘুমানোটা নিরাপদ নয়। তানিয়াকে ভিক্ষা করা থেকে ফেরানোর পাশাপাশি তার নিরাপদ বাসস্থানের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।