স্ত্রী-কন্যা-পরিবার এবং আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদাচরণসহ ১০ শর্তে মাদক মামলার দণ্ডিত এক আসামিকে প্রবেশনে পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের বিচারিক আদালত।
জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ বি এম তারিকুল কবীর সোমবার আসামির উপস্থিতিতে এই রায় দেন। প্রবেশনে দেয়ার ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ে এই প্রথম।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
দণ্ডিত মামুন সরকারের বাড়ি সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট বান্দিগড় ধনিপাড়া গ্রামে।
আইনজীবী আব্দুল হামিদ জানান, ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ বাড়ি থেকে পুলিশ মামুন সরকারকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে ৫৫টি ইয়াবা উদ্ধার করে। ওই দিনই ঠাকুরগাঁও সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নবিউল ইসলাম তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অনিল রায়।
মামলায় মামুন সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে ৫০০ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে মামুনের বাবা-মা অসুস্থ হওয়ায় এবং তার তিনটি ছোট বাচ্চা থাকায় মানবিক দিক বিবেচনা করে আদালত প্রবেশনের আদেশ দেয়।
দশটি শর্তে তাকে স্ত্রী শ্যামলী আক্তারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। তিনি থাকবেন জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে। শর্তগুলো না মানলে তাকে আবার কারাগারে যেতে হবে।
শাকিল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুনকে আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখব। আদালতের দেয়া ১০ শর্তাবলি তিনি পালন করছেন কি না, এ বিষয়ে তিন মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট দেয়া হবে। যদি তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তাহলে সেটিও আদালতে রিপোর্ট দেয়া হবে। পরে আদালত তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
প্রবেশনের ১০ শর্ত
- আদালত নিযুক্ত প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজেকে সমর্পণ করবেন তার বাসস্থান এবং জীবিকার উপায় সম্পর্কে প্রবেশন অফিসারকে অবহিত করবেন
- সৎ-শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করবেন এবং সদুপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবেন
- আদালত তলব করলে হাজির হয়ে দণ্ড ভোগ করতে বাধ্য থাকবেন
- সময় সময় প্রবেশন কর্মকর্তার দেয়া আইনানুগ মৌখিক বা লিখিত উপদেশসমূহ মেনে চলবেন
- দেশে প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ কর্মে লিপ্ত হবেন না
- স্বেচ্ছায় বা কারও প্ররোচনায় শাস্তিভঙ্গের কোনো কাজে লিপ্ত হবেন না অথবা অংশগ্রহণ করবেন না
- কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন করবেন না, হেফাজতে রাখবেন না এবং কোনো মাদকদ্রব্যসেবী বা বহনকারী বা হেফাজতকারীর সঙ্গে মেলামেশা করবেন না
- পরিবারের সদস্য তথা মা, স্ত্রী, মেয়ে, বোনসহ আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে অসদাচরণ করবেন না
- তাদের কাউকে মানসিক বা শারীরিকভাবে নির্যাতন করবেন না
- ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথভাবে মেনে চলবেন।