হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মুখোমুখি মিছিল বের করেছেন হরতালপন্থি ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
হরতাল দেখতে প্রায় দুই শরও বেশি সাধারণ মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে সকাল থেকেই সেখানে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন আছে।
কিছু রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেখা যায়নি তেমন কোনো যানবাহন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে সকালে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে যায় ছাত্ররা।
সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেয়া উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা হরতালবিরোধী স্লোগানে মিছিল শুরু করেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারী কাচারী রোডে এবং সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করছেন।
হরতাল দেখতে সকালে রাস্তায় জড়ো হন উৎসুক জনতা। ছবি: নিউজবাংলা
সেখানে থাকা পৌর ছাত্রলীগের কর্মী মো. রফিকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। তিনি জানান, হরতাল ঠেকাতে তারা মাঠে নেমেছেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তারা সতর্ক আছেন।
তিনি আরও জানান, হরতালপন্থিরা যেন মহাসড়কে অবস্থান না নিতে পারে, সে জন্য সকাল থেকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় পুলিশের সাঁজোয়া যান। ছবি: নিউজবাংলা
ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপার রাশিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতের অনুসারীরা। পটিয়া ডাকবাংলো মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন তারা।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, রোববার সকাল থেকে উপজেলার ডাকবাংলো মোড়ে জড়ো হয়ে তারা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ করেন। তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম মহানগরে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। শহরের সব সড়কে চলছে যানবাহন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন হেফাজত অনুসারীরা। ছবি: নিউজবাংলা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তার এই সফরের বিরোধিতা করে শুক্রবারই জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করেন কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও মোদির সফরবিরোধীদের সংঘর্ষ হয়।
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে ইটের দেয়াল তুলে বিক্ষোভ করে হাটহাজারী মাদ্রাসাছাত্ররা। ছবি: নিউজবাংলা
জাতীয় মসজিদের এই ঘটনার জেরে সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজত সমর্থকরা।
এ সময় তারা ডাকবাংলো, ভূমি অফিস ও হাটহাজারী মডেল থানায় হামলা চালায়। হেফাজতের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় থানা এলাকা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হন।
পরদিন চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে ইটের দেয়াল তুলে বিক্ষোভ করছে মাদ্রাসাছাত্ররা।