রংপুরের পীরগঞ্জে এখন চলছে কবর খোঁড়া। কোথাও একই পরিবারের সদস্যদের জন্য খোঁড়া হয়েছে পাশাপাশি পাঁচটি কবর, কোথাও চারটি আবার কোথাও তিনটি।
শোকে যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে পীরগঞ্জের পাঁচটি গ্রাম। সবাই ব্যস্ত স্বজনদের মরদেহ কোথায় রাখা হবে, কখন দাফন হবে তা নিয়ে।
মরদেহ আনতে স্বজনরা গেছেন রাজশাহী। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে আগুনে পোড়া মরদেহ।
রাজশাহীর কাটাখালীতে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। এতে সাত শিশুসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
সেই ১৭ জনের দাফন হবে শনিবার।
স্মরণকালে এ রকম শোক নেমে আসেনি রংপুরবাসীর জীবনে।
পীরগঞ্জের দাড়িতপাড়ার ১৯ বছর বয়সী পাভেল হারিয়েছে তারা বাবা মোখলেছার রহমান ও মা পারভীনকে। পাভেলের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।
একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়চৈত্রকোল রাঙ্গামাটি এলাকার ইয়াসিন আলী হারিয়েছেন ছেলে সালাউদ্দিন, পুত্রবধূ সামছুন্নাহার, আট বছরের নাতি সাজিদ ও দুই বছরের নাতনি সাফাকে।
- আরও পড়ুন: ‘ও আল্লাহ মোর ছৈলদেক ফিরি দিয়ে যা’
নিহত ব্যক্তির তালিকায় আরও আছেন বড় মজিদপুর এলাকার ফুলু মিয়া, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, মেয়ে সাবিয়া, সুমাইয়া ও ছেলে ফয়সাল; প্রজাপাড়ার তাজুল করিম ভুট্টু, তার স্ত্রী মুক্তা বেগম, ছেলে ইয়াসিন; বড় রাজারামপুর এলাকার কামরুন্নাহার, দুরা মিঠিপুর এলাকার শহিদুর ইসলাম এবং থানাপাড়ার হানিফ উদ্দিন পচা।
পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ্ত শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাইক্রোবাসে থাকা ছয় পরিবারের মধ্যে দুটি পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সবাই নিহত হয়েছে।’
আহাজারি করছেন নিহত ফুলু মিয়ার মা সাহিদা বেগম ও স্বজনরা। ছবি: নিউজবাংলা
নিহত ফুলু মিয়ার ছোট ভাই সুজন মণ্ডল বলেন, ‘পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে ভাই, ভাবিসহ পাঁচটি কবর একসঙ্গে করার কথা ভাবছি আমরা। সবাইকে পাশাপাশি রাখা হবে। সেটা বাড়ির পাশে না কবরস্থানে করা হবে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’
ছেলের পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ ইয়াসিন আলী। বাড়ির পাশেই দাফন করা হবে তার অতি আপন মানুষদের।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘যাদের চেনা যায়নি তাদের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে রাজশাহী পুলিশ। বিকেল নাগাদ আমরা লাশ পেতে পারি।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, শুক্রবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে তা আঘাত হানে পাশের একটি লেগুনাতে। সংঘর্ষের পর বাসটি পাশের একটি খাদে পড়ে যায়।
নিহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। পদ্মার পাড়ে পিকনিক শেষে তাদের এক পীরের কবর জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল।