চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে চার কর্মী নিহত হওয়ার জেরে দুই দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
তবে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশ থমথমে। বিজিবি থাকার কথা থাকলেও ওই এলাকায় দেখা গেছে র্যাব। একটি-দুইটি খাবার দোকান ছাড়া সব বন্ধ রয়েছে।
মাদ্রাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির রাস্তা বন্ধ আছে।
মাদ্রাসার গেটসংলগ্ন শাহ প্রিন্টিংয়ের মালিক শাহাব উদ্দিন জানান, দুই দিন ধরে কোনো ব্যবসা করতে পারছেন না। শুক্রবার তার দোকান ভাঙচুর করেছে ছাত্ররা। এই এলাকায় প্রায় ৮ থেকে ১০টা দোকান আছে। কারোরই ব্যবসা হচ্ছে না।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ভুক্তভোগী যাত্রী রুহুল আমিন জানান, খুব জরুরি কাজে তার খাগড়াছড়ি যাওয়া প্রয়োজন। এর জন্য হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। কিন্তু এখন সব গাড়ি বন্ধ থাকায় বিপদে পড়ে গেলেন। তাকে রাঙ্গামাটি হয়ে যেতে হবে পাশের জেলাটিতে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকালকের আন্দোলনে আমাদের একটি শটগান ও একটি পিস্তল খোয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হয়তো নিয়ে থাকতে পারে।’
ওসি আরও বলেন, ‘উপর মহলের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকার পরিবেশ থমথমে। ছবি: নিউজবাংলা
হেফাজতের কর্মসূচি
হাটহাজারীর ঘটনায় শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ আর পরদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার কথা জানায় হেফাজত।
শুক্রবার রাতে পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুর রব ইউসূফী জানান, হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর পক্ষ থেকে ঘোষিত এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে সমমনা ধর্মভিত্তিক দলগুলো।
কী হয়েছিল শুক্রবার
হেফাজত মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধী ছিল। মোদি ঢাকায় আসার পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় তার সফরবিরোধীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে তারা।
সংগঠনের সদর দপ্তর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে গিয়ে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের পাশাপাশি হামলা হয় হাটহাজারী থানায়।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। আর তখন পিছু হটে হেফাজত কর্মীরা।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে শনিবার সকাল থেকে বিজিবির উপস্থিতি দেখা যায়। ছবি: নিউজবাংলা
একজনের প্রাণহানি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে হামলা করে বিভিন্ন জিনিসপত্রে আগুন দেয়া হয়। আগুন দেয়া হয় রেললাইনেও। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে।
মাদ্রাসার ছাত্ররা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতেও সড়ক অবরোধ করে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে।