চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ডাকবাংলা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও থানায় হামলার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা।
রেল স্টেশন ও লাইনে আগুন দেয়ার পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি হয় এক জনের।
এর আগে হাটহাজারী থানায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় চার জন। এসব ঘটনায় আগামী রোববার সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে হেফাজত কর্মীরা।
শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা জেলা সদরের জাদুঘর এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. শোয়েব আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, বিকেল চারটার দিকে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারসহ সাতটি কক্ষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে মাদ্রাসাছাত্ররা।
তিনি জানান, তারা রেললাইনের পাশে স্তূপ করে রাখা কাঠের স্লিপার লাইনের ওপরে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আহত অবস্থায় এক যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসে কয়েকজন। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করার পর পরই ওই যুবকের মরদেহ তারা জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
নিহত যুবক পৌর এলাকার দাতিয়ারার বাসিন্দা মো. আশিক। ২০ বছর বয়সী এই যুবকের পেটে ক্ষতচিহ্ন ছিল।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যায় কোর্ট এলাকার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মাদ্রাসাছাত্ররা হামলা চালালে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়।
এ সময় ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নূরুল আলম গুরুতর আহত হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়।
এসব ঘটনা ঘটেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে।
হেফাজত মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধী ছিল। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই সফরের প্রতিবাদে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বলেও নিশ্চিত করেছিল তারা।
তবে মোদি ঢাকায় আসার পর বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভের চেষ্টা করে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে থাকা সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা।
চার ঘণ্টা ধরে চলা এই বিক্ষোভের মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে হেফাজত কর্মীরা।
সংগঠনের সদরদপ্তর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে গিয়ে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের পাশাপাশি হামলা হয় হাটহাজারী থানায়।
এ সময় পুলিশ প্রতিহত করলে গুলি করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। আর তখন পিছু হটে হেফাজত কর্মীরা।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ আট জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভে নামে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্ররা। তবে দুই ঘণ্টা পর পিছু হটে তারা।