মোর কিছু থাকিল নে, ও আল্লাহ তুই মোকে নিয়ে যা মোর ছৈলদেক ফিরি দিয়ে যা…। এসব কথা বলে আহাজারি করছিলেন বৃদ্ধা সাহিদা বেগম। তিনি শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালীতে মাইক্রোবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফুলু মিয়ার মা।
সাহিদা বেগম শুধু ছেলে হারিয়েছেন তা নয়, হারিয়েছেন ছেলের বউ, এক নাতি ও দুই নাতনিকে।
তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে এরা আর নেই। তিনি বিলাপ করছেন আর বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন।
রাজশাহীর কাটাখালীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় সাত শিশুসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
এসব গ্রামে এখন স্বজন হারানোর মাতম চলছে। কে কাকে স্বান্তনা দেবেন তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।
নিহত ফুলু মিয়ার ছোট ভাই সুজন মন্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই ফুলু মিয়া পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মোটর পার্টসের ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে ব্যবসা করতেন তাজুল করিম ভুট্র এবং মোখলেছার রহমান। তারা সবাই আজ সকাল ৬ টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে রাজশাহী যান।
‘পদ্মার পাড়ে পিকনিক শেষে তাদের এক পীরের জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’
নিহত তাজুল করিম ভুট্রর বড় ভাই জুয়েল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভাই আমাকে বলেছিলেন রাজশাহী যাব, একটু বাসাটা দেখিস। এরপর আজ সকালে আরো দুই ব্যবসায়ীসহ রাজশাহী যান। কিন্তু ভাই তো আর ফিরে এল না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রী এবং একমাত্র আদরের ভাতিজাকেও আজ হারালাম।’
হায়দার আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘অনেক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু একসঙ্গে এলাকার এত মানুষের মৃত্যু আগে কখনো দেখিনি আমরা। একই পরিবারে সবাইর নিহত হওয়ার ঘটনা খুব কষ্টের।’
একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়
পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুদীপ্ত শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জ থানা পাড়ার আন্জু মিয়ার ছেলে হানিফ উদ্দিন উদ্দিন পচার মাইক্রোবাসে করে ১৮ জন রাজশাহীতে পিকনিক করতে যাচ্ছিলেন। রাজশাহীর কাটাখালীতে দুর্ঘটনায় ১৮ জনের ১৭ জনই নিহত হয়।
পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেষ চন্দ্র জানান, নিহতদের শনাক্তের জন্য ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের চেনা যাবে না তাদের ডিএনএ টেস্ট করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।