বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে নৌকা সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২০ জনেরও বেশি সমর্থক আহত হন।
ইউনিয়নের ছোটলবনগোলা মিয়া বাড়ির সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় প্রচার শুরু করলে নৌকার সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়। তবে নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের পাল্টা অভিযোগ, হুমায়ুনের সমর্থকরাই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আনারস প্রতীক পাওয়ার পর বিকেল পাঁচটার দিকে দিকে হুমায়ুন কবীর তার সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় প্রচার শুরু করেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তিনি ছোটলবনগোলা এলাকার মিয়া বাড়ির সামনে পৌঁছালে সিদ্দিকুরের শতাধিক সমর্থক আনারস সমর্থকদের মোটরসাইকেল বহরে হামলা চালায়।
ওই মোটরসাইকেল বহরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবিরও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আজ প্রতীক পাওয়ার পর সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় প্রচার শুরু করি। নৌকা সমর্থকরা হামলার জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লবনগোলা এলাকায় অবস্থান করছিল।
ওই এলাকা দিয়ে যাবার সময় সিদ্দিকুরের ভাইয়ের ছেলে সুমনের নেতৃত্বে মুছা, ইমরান, জাহাঙ্গীর, সিদ্দিক, রিয়াজ, জহিরুল, রুহুল আমিনসহ শতাধিক লোক আমাদের মোটরসাইকেল বহরে অতর্কিত হামলা চালায়।’
কবির জানান, হামলার সময় তার কর্মীরা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করলে হামলাকারীরা রামদা, চল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ ঘটনায় সরোয়ার, মনির, রাকিব, রুবেল, আল আমিন, মেহেদী, মোখলেস, রহিমসহ অনেক কর্মী আহত হয়েছেন।
আহদের মধ্যে মোখলেস, রহিম ও রাকিবসহ পাঁচজনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরোয়ার, আল-আমিন ও রুবেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত অনেকে হামলার ভয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপতালে যেতে পারছেন না। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদেরও সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলেও কবিরের অভিযোগ।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় হুমকি দেয়া হয়েছিল, নৌকার বিপরীতে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের প্রতিহত করা হবে। নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে হাত-পা ভেঙে পায়রা নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তাদের সভার সেই সিদ্ধান্তই আজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হুমায়ুনের সমর্থকরা আমার লোকজনকে মারধর করেছে। এ সবই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। হামলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যদি কোথাও এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে নৌকার কোনো সমর্থক জড়িত নয়।’বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকা ও স্বতন্ত্র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোকজন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
‘আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।’
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বরগুনা সদর থানায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করেনি। তবে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাঠিসোটা উদ্ধার করেছে। বরগুনায় প্রথম ধাপের ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ১১ এপ্রিল। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ১ হাজার ৬১২জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্য চেয়ারম্যান পদে সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৪২ জন, আমতলির ৬টি ইউনিয়নে ৫১ জন, বেতাগী ৭টি ইউনিয়নে ২৮ জন, পাথরঘাটার ৩টি ইউনিয়নে ২৭ জন ও বামনার ৪টি ইউনিয়নে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ওইসব ইউনিয়নে সংরক্ষিত পদে ৩৪৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৭৯জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ইলেকট্রনিক পদ্বতিতে ইভিএম এ ভোটগ্রহণ করা হবে ৪টি ইউনিয়নে।