সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম।
বৃহষ্পতিবার বিকেলে তিনি সাতক্ষীরা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের কাছে এ সাক্ষ্য দেন। আগামী ১ এপ্রিল ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামি শনাক্তের দিন ধার্য করা হয়েছে। এ নিয়ে এ মামলায় ১৮জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান (৩৬) বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেন রায়হানুরকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতেন।
এরই জের ধরে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই শাহীনুর (৪০), ভাবি সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের বাড়ি খাওয়ান।
পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তবে শাহীনুরের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে ওই চারজনের লাশের পাশে ফেলে রেখে যান।
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হিসেবে রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। রায়হানুরকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মণ্ডলের কাছে একাই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
শাহীনুরের পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম আসামি রায়হানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে এ মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠনের পর বাদি ময়না খাতুন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বলেন, এ পর্যন্ত এ মামলায় ১৮ জন সাক্ষী দিয়েছেন। ১ এপ্রিল ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামি শনাক্তের দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা ১ এপ্রিল সাফাই সাক্ষ্য দেবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ। আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন অ্যাডভোকেট মো. ফরহাদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জগলু।