থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ‘আপত্তিকর প্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী পরিদর্শক।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের কাছে বুধবার বিকেলে লিখিত আকারে এ অভিযোগ দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ওই পরিদর্শক।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দামকুড়া থানার এখনকার ওসি মাহবুব আলমের সঙ্গে ২০১৩ সালে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মাহবুব বোয়ালিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন। বিয়ের পরপরই তাদের মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ।
বোয়ালিয়া মডেল থানার কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণকে তিনি সে সময় তাদের কলহের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এ সময় নিবারণ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দেন এবং রাজি না হওয়ায় হুমকি দিতে থাকেন।
নিবারণ বলতেন, ‘তুমি মাহবুবের সঙ্গে কেমনে সংসার করো- তা দেখে নেব। তুমি আমার প্রস্তাব মেনে নাও, তোমার সংসার সুন্দর ও সুখের হবে।’
এরমধ্যেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করায় ২০১৮ সালে মাহবুব আলমের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। একই বছর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি হন নিবারণ।
২০১৯ সালে ওই নারী কর্মকর্তা মাহবুব হোসাইন নামে এক সাংবাদিককে বিয়ে করেন।
নারী কর্মকর্তা জানান, গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার দিকে মাহবুব হোসাইন তাকে ফোন করে জানান, বাড়িতে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ এসেছে। এরপর আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
রাতে ওসি নিবারণ ও পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফকে ফোন করলে তারা কেউ ধরেননি। পরদিন সকালে তিনি বোয়ালিয়া থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে জানতে পারেন, উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তার স্বামীকে থানায় নিয়ে গেছে।
এ সময় ওসি নিবারণ তাকে দেখে আপত্তিকর কথা বলতে থাকেন। প্রতিবাদ করলে নিবারণ বলেন, ‘আরে তোমার স্বামী তো শিবির করে, তোমার স্বামীকে কে বাঁচাবে? আর কমিশনার! আমি যা বলব, কমিশনার কি তার বাইরে যাবে নাকি? এখন কী করবা? স্বামী বাঁচাবা, না আমার কথা রাখবা?’
ওই নারী পরিদর্শকের অভিযোগ, ওসি তাকে শায়েস্তা করতে ইচ্ছে করে স্বামীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেন। এখন তার স্বামী জেলহাজতে।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তার নামে থানায় কোনো জিডিও নাই। আমি সবকিছু ভালোমতো জেনেই তাকে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর থেকে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি। কিন্তু ওসির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। একেবারে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তিনি (নিবারণ) এ কাজ করেছেন।’
এ বিষয়ে ওসি নিবারণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন দাবি করেন।
ওসি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে আমি কোনো খারাপ আচরণ করিনি। তার স্বামীকে না ছাড়ার কারণে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তার স্বামী শিবিরের ক্যাডার, তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে।
‘তাকে ছাড়ার জন্য ওই নারী কর্মকর্তা রিকোয়েস্ট করেছিলেন। ১৬ তারিখ তার স্বামী গ্রেপ্তার হয়েছেন। ১০ দিন পর তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করছেন।’
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, বুধবার বিকেলের দিকে ওই নারী কর্মকর্তার অভিযোগটি জমা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।