ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভা নির্বাচনে জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করার কথা বলে এক কাউন্সিলর প্রার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
পৌরসভার তুলাতলী এলাকায় নিজ বাড়িতে বুধবার সন্ধ্যায় বেশ কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
শাহ জাহান নামের ওই ব্যক্তি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ফেসবুক লাইভে এসে মনোনয়ন-বঞ্চনার বিচার চেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শাহ জাহান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলেছেন, পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে। আপনার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমি কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করি। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা আমাকে সকাল থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাপ দিতে থাকেন।
‘আমি তাদের চাপে পড়ে আত্মগোপনে চলে যাই। বিকেলে তারা বাড়ি গিয়ে আমার বৃদ্ধ মাকে চাপ দেন। খবর পেয়ে বাড়িতে গেলে তারা আমাকে জোর করে ধরে নির্বাচন কার্যালয়ে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন।’
ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন, ‘যারা জোর করে আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী থাকবেন।’
শাহ জাহানের পরিবার জানায়, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করায় সন্ধ্যায় তিনি ঘরের ভেতরে দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে দরজা খুলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাদেকুল করিম বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় শাহ জাহান নামের একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। দ্রুত তার পাকস্থলী পরিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ সত্য নয়। কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন সেটি আমরা দেখছি। আত্মহত্যার চেষ্টা অন্য কোনো কারণ হতে পারে।’
এর আগে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের অব্যাহত হুমকিতে বুধবার বিকেলে শাহ জাহান রিটার্নিং কর্মকর্তা অজিত দেবের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বুধবার শাহ জাহান ছাড়াও মেয়র পদে ২ জন ও কাউন্সিলর পদে ১০ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
আগামী ১১ এপ্রিল সোনাগাজী পৌরসভা নির্বাচন। মেয়র পদে ৬ প্রার্থী, সংরক্ষিত আসনে ছয়জন ও সাধারণ আসনে ৩২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম খোকন, জামায়াত নেতা হেদায়েত উল্যাহ ভূঞা (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ হিজবুল্লাহ, আবু নাছের (স্বতন্ত্র), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শেখ সেলিম ও নূরনবী।
বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে নেই কোনো তৎপরতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার অজিত দেব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সোনাগাজী পৌর নির্বাচন নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও করেননি।’