বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বারবার আগুন

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২১ ২১:৫০

সেতারা বেগম বলেন, ‘আমরা ছোট ঘরে থাকি। খাওয়া ঘুম এখানেই। কোনো রকমে মাথা গুঁজে থাকি। এখানে আবার গ্যাস সিলিন্ডারও রাখতে হয়। এ কারণে চুলা আর গ্যাস সিলিন্ডার পাশাপাশি রাখি। তাই অনেক সময় আগুন ধরে যায়। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নাই। আমাদের তো আর জায়গা নাই।’

২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে আগুন লাগে। এতে পুড়ে যায় মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ৫১৩টি ঝুপড়িঘর। ওই দিন রাতেই ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

চার দিন পর ১৮ জানুয়ারি রাতে আগুন লাগে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা ১৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এতে পুড়ে যায় ১৪টি ঘর।

সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার চার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। এই আগুনের বিস্তৃতি ও তীব্রতা ছিল আরও বেশি। আগুনে পুড়ে মারা যান ১১ জন। পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩০০টি ঘর। আগুনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ।

কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু স্টেশনের ছয়টি ইউনিট এদিন রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, সোমবারের এই আগুনের সূত্রপাত রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে।

নিউজবাংলার প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালুখালী ক্যাম্পের-৮ ডব্লিউ আই ব্লকের বাসিন্দা মৌলভী খলিলুর রহমানের ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত। পরে তা একে একে ছড়িয়ে পড়ে ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্পে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুধু এই তিনটি ঘটনা নয়, এর আগে এবং পরে একাধিকবার রোহিঙ্গাদের ঘরে আগুন লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ।

তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত মোট কতবার আগুন লেগেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

জেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এ দেশে আসার পর বনের কাঠ জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যবহার করত। এতে করে কক্সবাজারের বন উজাড় হয়ে যাচ্ছিল। পরে বন বাঁচাতে এনজিওগুলোর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে গ্যাস সিলিন্ডার দেয়া শুরু হয়।’

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটি অক্সফামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে

সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের এমন কোনো ঘর পাওয়া যায়নি যেখানে ঘরে একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার নেই। বালুখালী ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ক্যাম্পের অন্তত ১০০ ঘরের প্রত্যেকটিতে গ্যাস সিলিন্ডার দেখা গেছে।

৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল আলম ‍নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের শুরু থেকে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের মাঝে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ শুরু করে। এরপর থেকে ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডারের ছড়াছড়ি।’

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা ইমদাদুল হক বলেন, ‘ক্যাম্পে এ পর্যন্ত যেসব আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ৯০ শতাংশের কারণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। অরক্ষিতভাবে সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। একটিতে আগুন ধরলে অন্যটি রক্ষা করা কঠিন। এ ছাড়া বসতিগুলো নির্মাণ হয়েছে একাধিক পাহাড়ের ঢালুতে। সেখানে হেঁটে হেঁটে আসা-যাওয়া করেন রোহিঙ্গারা। যেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না, সেখানে দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছানো অনেক কঠিন বিষয়। এজন্য আগুন লাগলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।’

বালুখালী ক্যাম্প-৯-এর বাসিন্দা সেতারা বেগম রোহিঙ্গাদের স্থানীয় ভাষায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোট ঘরে থাকি। খাওয়া ঘুম এখানেই। কোনো রকমে মাথা গুঁজে থাকি। এখানে আবার গ্যাস সিলিন্ডারও রাখতে হয়। এ কারণে চুলা আর গ্যাস সিলিন্ডার পাশাপাশি রাখি। তাই অনেক সময় আগুন ধরে যায়। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নাই। আমাদের তো আর জায়গা নাই।’

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে প্রায় ৯০ লাখ এলপিজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সিলিন্ডার রয়েছে। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) সিলিন্ডার রয়েছে প্রায় ৪ লাখ।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় চার লাখ সিলিন্ডার রয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি পরিবারের একাধিক সিলিন্ডারও রয়েছে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কোনো সিলিন্ডার নিজে নিজে বিস্ফোরিত হতে পারে না। সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় আগুনের তাপে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মূল কারণ হচ্ছে আগুন। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘরগুলো ঝুপড়ির মতো। খুব অল্প জায়গায় তারা রান্না করে। এ কারণে সিলিন্ডারটি তাপের সংস্পর্শে থাকে। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।’

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার থেকে নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। সিলিন্ডার ভালো থাকলেও নিম্নমানের রেগুলেটর ব্যবহার করা হলে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। গ্যাসের চুলা ব্যবহারে যথাযথ সতর্কতা ও সচেতনতার অভাবেও দুর্ঘটনা ঘটে।’

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘সিলিন্ডার যদি দুর্বল বা পুরাতন হয় তাহলে বিস্ফোরণ ঘটবে। আর সিল্ডিারগুলো ঠান্ডার মধ্যে রাখার নিয়ম। খাড়া করে রাখতে হয়। চুলা নেভানোর পর সিলিন্ডারের চাবি বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু দেখা যায়, নিয়ম না মানার কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটে। নিয়ম না মানলে একেকটি সিলিন্ডার বোমায় পরিণত হতে সময় নেয় না।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হাতে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ পালিয়ে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসেন আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। এর মধ্যে উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা রয়েছেন প্রায় ৯ লাখ।

এ বিভাগের আরো খবর