রাহেলা বেগম। বয়স ৮০ পেরিয়েছে তিন বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর থাকতেন নিজ বাড়িতে বড় ছেলের সঙ্গে। কিন্তু হঠাৎই মেজো মেয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ তোলে।
মীমাংসার জন্য থানা হয়ে বিষয়টি গড়ায় আদালতে। বিচারক শেষ পর্যন্ত মাকে ওই মেয়ের জিম্মায় দেন। কিন্তু মা থাকতে চান ছোট মেয়ের কাছে।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নলছিয়া গ্রামের এই ঘটনা শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
মৃত উসমান গণির স্ত্রী রাহেলা বেগমের এক ছেলে ও চার মেয়ে। গেল বছর স্বামীকে হারান তিনি। এর পর থেকে নিজ বাড়িতে ছেলে আলতাফুর রহমানের কাছেই শুরু করেন বসবাস। সেখানে তিনি ‘ভালোই’ ছিলেন।
হঠাৎ মেয়ে আনোয়ারা বেগম বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। মায়ের চিকিৎসা নিশ্চিতে ও তার জিম্মায় দিতে গত বুধবার সাধারণ ডায়েরি করেন মাদারগঞ্জ থানায়।
অভিযোগ পেয়ে বুধবার বিকেলে রাহেলাকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ওই দিন বিকেল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত থানাতেই থাকতে হয় তাকে।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুবুল হক জানান, বৃদ্ধার মেয়ে আনোয়ারার অভিযোগের ভিত্তিতে রাহেলা বেগমকে ছেলের বাড়ি থেকে থানায় আনা হয়। তিনি যেহেতু আসামি নন, তাই তাকে গারদখানায় রাখা হয়নি। তাকে রাখা হয় থানার নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্কের দায়িত্বে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে। বুধবার রাতে তাকে ভালো খাবারের ব্যবস্থাসহ কম্বল বিছানাও দেয়া হয়।
ওসি আরও জানান, রাতে ছেলে আলতাফুর রহমান ও তিন মেয়েকে নিয়ে থানায় বৈঠক হয়। এ সময় মাকে নিজের কাছে রাখার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন আনোয়ারা। কিন্তু মা যেতে চান তার মেয়ে আয়শা বেগমের কাছে।
আয়শা আবার কাছে রাখতে চান না মাকে। সংসারে অভাবের কথা বলে প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। জটিলতা তৈরি হলে আদালতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বৃদ্ধা রাহেলাকে।
বৃহস্পতিবার তাকে জামালপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীরের আদালতে নেয় পুলিশ। বিচারক মাকে আনোয়ারার জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন।
ছেলে আলতাফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মা তার কাছে সুখেই ছিলেন। কিন্তু তার কিছু সম্পত্তির লোভে বোনরা জোটবদ্ধ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। প্রভাব খাটিয়ে মাকে তারা বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।’তিনি আরও বলেন, ‘মাকে তার জিম্মায় নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার আইনজীবীর মাধ্যমে একই আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন। বিচারক শুনানির দিন ঠিক করেছেন ২২ মার্চ।’
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাকে নিয়ে এমন রশি টানাটানির ঘটনা জামালপুরে এর আগে তেমন হয়নি। শুধু ছেলেমেয়ের দ্বন্দ্বের কারণেই বৃদ্ধা মাকে কষ্ট করে সারা রাত থানায় থাকতে হলো। জীবনে প্রথমবার আদালতের বারান্দায় যেতে হলো তাকে। তিনি পাঁচ সন্তানের জননী। কিন্তু তিনি যে কার মা সেটা বোঝা এখন মুশকিল।’