দিন দিন বেড়েই চলছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অধীন এলাকাগুলোতে মশার অত্যাচার। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। করোনার পাশাপাশি মশার উপদ্রব জনজীবনে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব বেশি দেখা যাচ্ছে। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দিনের বেলায়ও ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই বেশি আক্রমণে যায় মশারা। মাঝেমধ্যে ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বর্তমানে নগরীর বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার উপদ্রব। কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়ে মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করছেন নগরীর বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না, দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে শিশুদের ঘুম পাড়াতে হয়। মশা নিধনে নিয়মিত ড্রেন ও আগাছা পরিষ্কারের দাবি বাসিন্দাদের।নগরীর নতুন বাজার এলাকার পাপ্পু মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন ধরে এ এলাকায় মশার উপদ্রব এত বেড়েছে যে, বাসায় থাকাই কঠিন। শোবার ঘরে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও খাওয়া বা গোসলের সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের উচিত মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করা।’সানকিপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ সমলা খাতুন বলেন, ‘এই এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনের লোক আসে, রাস্তার মোড়ে একটু ধোঁয়া মেরে চলে যায়, বাসার গলিতে আসে না।’
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক সময় মশার কয়েল বা স্প্রে করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে করেও মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। সিটি করপোরেশনের উচিত মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি নিয়মিত ঝোপঝাড় ও আগাছা পরিষ্কার করা।’কথা হয় আনন্দ মোহন কলেজ মাঠে আড্ডা দিতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, তারা বিকেলে বন্ধুরা মিলে কলেজের মাঠে আসেন গল্প আড্ডা দিতে, কিন্তু মশার উপদ্রব এত বেশি যে এখন মাঠে বসাই যায় না।আনন্দ মোহন কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার মতো স্থান বলতে আমরা কলেজ মাঠ ও মাঠ সংলগ্ন মুক্ত মঞ্চকেই বুঝি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে মাঠে বসি চা আড্ডায়। কিন্তু এখন আমাদের কলেজ এরিয়াতে মশার উপদ্রব এত পরিমাণ বেড়েছে যে আমরা কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না।
‘আমি আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র হিসেবে আমাদের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র কলেজ মাঠকে মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত রাখতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মশা নিরোধ কার্যক্রম হিসেবে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর জন্যে জোর দাবি জানাচ্ছি।’মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে দ্রুত ক্রাশ প্রোগ্রামের দাবি জানিয়েছেন জেলা জনউদ্যোগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু।
তিনি বলেন, ‘শুধু ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন কতটা কার্যকর তা সিটি করপোরেশন ভালো জানে, কিন্তু শহরের একজন বাসিন্দা হিসাবে আমার মনে হয় না এটা ফলদায়ক কিছু। কিট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সেই রকম ওষুধ প্রয়োগ করা দরকার যা মশার লার্ভা নষ্ট করে দেবে।’
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন ‘মশক নিধনে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন মশার উপদ্রব কিছুটা বেশি। আমরা নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মশার উপদ্রব মোকাবিলা করতে কাজ করছি।’