শাল্লায় হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জে সব ধরনের ধর্মীয় সভা-সমাবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সুনামগঞ্জের ইমাম, ওলামা ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে শাল্লায় হামলা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের প্রতি অনুরোধ কোথাও ধর্মীয় সভা সমাবেশ করবেন না। জামালগঞ্জে যে ইসলামি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, তা স্থগিত করতে হবে। এই সম্মেলনে হেফাজত নেতা মামুনুল হক আসতে পারবেন না।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, ধর্মীয় নেতা মাওলানা আব্দুল বাছির, নুরুন উদ্দিন, আলী নূর, বদলুর আলম, ইদ্রিস আহমদ, মুজিবুর রহমানসহ অনেকে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনে জরুরি বেঠক
ধর্মীয় নেতা মাওলানা আব্দুল বাছিরসহ অন্যরা বলেন, ‘শাল্লায় হিন্দুবাড়িতে হামলার ঘটনায় আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ইসলাম এ ধরনের কাজ সমর্থন করে না।’
সভায় সুনামগঞ্জ-সিলেট আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার বলেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ করব, আপনারা বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সব ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত রাখবেন।’
গত সোমবার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক শাল্লা লাগোয়া দিরাইয়ে একটি ধর্মীয় সভা করেন। তিনি সেখানে গিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় এক যুবক মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মামুনুলের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে স্ট্যাটাসদাতাকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে।
তবে হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এতেও সন্তুষ্ট হননি। দিরাইয়ের দুটি মসজিদে মাইকিং করে নেতা-কর্মীদের জড়ো করে মিছিল করে শাল্লার গ্রামে এসে ব্যাপক হামলা করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এই জমায়েত ও মিছিলের কথা জানত স্থানীয় প্রশাসন। তবে হেফাজত নেতারা তাদের আশ্বাস দেন, তারা কেবল মিছিল করে চলে আসবেন। আর সে আশ্বাসে আস্থা রেখে পুলিশ নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। আর হেফাজত কর্মীরা নির্বিঘ্নে হামলা করে চলে যায়।
এদিকে শাল্লার ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই আগামী রোববার সুনামগঞ্জের আরেক উপজেলা জামালগঞ্জ ইসলামি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা আয়োজিত ‘খতমে বুখারি ও ইসলামি মহাসম্মেলনে’ মামুনুলকে অতিথি করে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এই সমাবেশের অতিথির তালিকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদেরও নাম রয়েছে।
উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড মাঠের এই আয়োজনে অতিথি তালিকায় নাম রয়েছে জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার (সাজিব), জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (সুহেল) এবং জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর।তবে শাল্লার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এই নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা না বলেই মামুনুলের সমাবেশে অতিথি করা হয়েছে।অবশ্য আয়োজকদের দাবি, সবার সঙ্গে আলাপ করেই অতিথি করা হয়েছিল। এখন অনেকে তা অস্বীকার করছেন।