সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হামলার ঘটনাস্থল শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে পরিদর্শনে গিয়ে সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ শুক্রবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানান।
তিনি জানান, দিরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ২২ জনকে। এর মধ্যে দুইজনকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আর ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশের করা মামলায়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, দুই মামলায় ২২ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রাতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। সুনামগঞ্জের বিচারিক হাকিম বেগম ইসরাত জাহানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।
ডিআইজি মফিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলায় জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা এক দিনেই ২২ জনকে আটক করতে পেরেছি। সামনে বাকি আসামিদেরও খুঁজে বের করব।’
বুধবার শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৭টি হিন্দুবাড়িতে হামলা চালানো হয়। এসব বাড়ি থেকে টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম মামলাটি করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের সদস্য স্বাধীন মিয়াকে। তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি।
কয়েক হাজার মানুষ দা-লাঠিসহ মিছিল নিয়ে এসে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দু বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
এর পর পুলিশের করা মামলায় দেড় হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তবে এই মামলার বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে কারও নাম বা মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারব না।’
গত সোমবার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক শাল্লায় একটি ধর্মীয় সভা করেন। তিনি সেখানে গিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় এক যুবক মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মামুনুলের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে স্ট্যাটাসদাতাকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে।
হামলার পর ঘর ছেড়ে হাওরে আশ্রয় নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: নিউজবাংলা
তবে হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এতেও সন্তুষ্ট হননি। দিরাইয়ের দুটি মসজিদে মাইকিং করে নেতা-কর্মীদের জড়ো করে মিছিল করে শাল্লার গ্রামে এসে ব্যাপক হামলা করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এই জমায়েত ও মিছিলের কথা জানত স্থানীয় প্রশাসন। তবে হেফাজত নেতারা তাদের আশ্বাস দেন, তারা কেবল মিছিল করে চলে আসবেন। আর সে আশ্বাসে আস্থা রেখে পুলিশ নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। আর হেফাজতকর্মীরা নির্বিঘ্নে হামলা করে চলে যায়।