হাতির সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণীটির শুঁড়ের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে বন বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ।
গেল ১১ মার্চ প্রাণ হারানো ওই ছাত্রের নাম অভিষেক পাল। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত।
বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন,‘ঘটনার পর আমরা অভিষেকের পাঁচ বন্ধু ও সিএনজি অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলেছি কামাইল্যাছড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গেও। তারপরই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।’
তিনি আরও জানান, তেজগাঁও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্র ১০ মার্চ রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বেড়াতে যান। পরদিন সকালে একটি সিএনজি অটোরিকশায় কাপ্তাই থেকে হয়ে রাঙ্গামাটি যাচ্ছিলেন তারা।
পথে কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কের কামাইল্যাছড়ি এলাকায় তারা দুটি হাতি দেখতে পান। এরমধ্যে একটি বাচ্চা হাতিও ছিল। হাতি দেখে অভিষেক পালসহ তিনজন অটোরিকশা থেকে নামেন।
তিনি আরও জানান, অভিষেকসহ তিন ছাত্র হাতিটির কাছাকাছি যান। অভিষেক প্রাণীটির সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় হাতিটি চিৎকার শুরু করে। ভয়ে বনের দিকে দৌঁড় দেন অভিষেক।
প্রাণীটি অভিষেকের পেছন পেছন বনের দিকে যায়। এরপর সেটি বনের মধ্যে অভিষেককে শুঁড় দিয়ে আঘাত করে। সেখানেই অভিষেকের মৃত্যু হয়। অভিষেকের মুখ ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
অভিষেক পালের মামাত ভাই বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা কাপ্তাই থানায় গিয়েছি। অভিষেকের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললেও তারা আমাদের সঠিক তথ্য দেয়নি। কিন্তু অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম জানায়, অভিষেকসহ তিন বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে হাতির কাছাকাছি গেলে এটি রেগে গিয়ে আক্রমণ করে। এরপরই বনের মধ্যে দৌঁড়ে পালান অভিষেক। সেখানেই হাতিটি অভিষেককে আঘাত করে।’
ঘটনার পর অভিষেকের বন্ধু সাদমান সোবহান উদয় জানান, তারা ছয় বন্ধু ১১ মার্চ সকালে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে দুটি বন্য হাতির সামনে পড়েন। এ সময় অভিষেক বনের দিকে দৌঁড়ে পালাতে গেলে তাকে ধাওয়া দেয় ও পায়ে পিষ্ট করে একটি হাতি। পরে আহত অবস্থায় অভিষেককে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
তবে অভিষেকের বন্ধুর দেয়া এই তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান এবং কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন।
ওসি মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘অভিষেকের ওই পাঁচ বন্ধু ঘটনাটি লুকাতে চেয়েছিল। কিন্তু অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম আমাদেরকে সঠিক তথ্য দিয়েছেন।’
ওসি জানান, এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত না করে মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করেন অভিষেকের বাবা সুধাংশু বিকাশ পাল। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিষেকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনার পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
হাতি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এএইচএম রায়হান সরকার।
তিনি বলেন, ‘কাপ্তাইয়ের ঘটনাটি জেনে মনে হয়েছে, তিনবন্ধু যখন হাতিগুলোর কাছে চলে গিয়েছিল, তখন মা হাতিটি অনিরাপদ বোধ করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করে সেটি। হাতি একটি শান্ত প্রাণী, কিন্তু নিরীহ নয়। যখন হাতি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে, তখনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ জন্যই শান্তশিষ্ট এই প্রাণীটিকে ক্ষিপ্ত করা থেকে বিরত থাকা উচিত।’