বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমি এখন কেমনে থাকুম আল্লাহরে…’

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২১ ২০:৩৩

মাহমুদের ছোট ভাই বুলবুল আহম্মেদ জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার ভাইয়ের চিকিৎসা চলছিল এবং তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তিনি ১১ নম্বর শয্যায় ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বুধবার সকাল ৮টার দিকে ১২ নম্বর শয্যার ভেন্টিলেশন সিস্টেম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় ওই ওয়ার্ডের একজন বয় আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। নেভাতে না পারায় একপর্যায়ে আগুন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

‘আমার ছেলে কারো ক্ষতি করে নাই, কারো মাথায় বাড়ি দেয় নাই, তাও আমার ছেলের এমন ক্ষতি হইলো, আমি এখন কেমনে থাকুম আল্লাহরে। তুমি আমার এমন ক্ষতি কেন করলা রে আল্লাহ।’ বড় ছেলের মৃত্যুর খবরে এভাবেই আহাজারি করছিলেন রোকেয়া বেগম।

তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আবদুল্লাহ আল মাহমুদের মা। আর মায়ের পাশেই বসে কেঁদে ভাসাচ্ছিলেন মাহমুদের বোনেরা।

মাহমুদের স্ত্রী ডালিয়া আক্তার স্বামীর মৃত্যৃর খবরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আর বাবাকে হারিয়ে মায়ের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছিল দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মহুয়া বিনতে মাহমুদ ও প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মাহি আল মাহমুদ ।

নিহত আবদুল্লাহ আল মাহমুদের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ কুমুদনগর গ্রামের বাড়িতে বুধবার দুপুরে এসব হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

বুধবার সকাল সোয়া আটটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) আগুন লাগে এবং ৮টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের ঘটনায় আইসিউতে থাকা তিন রোগী মারা যান। এদেরই একজন হচ্ছেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি ধামরাইয়ের ঈশাননগর দেলদা এসকেআই দাখিল মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক ছিলেন।

পরিবার ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, গত মাসের ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৬ দিনের জন্য গণিত বিষয়ে প্রশিক্ষণে গাজীপুর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যান মাহমুদ। প্রশিক্ষণের মধ্যে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর থেকেই ঠান্ডা,জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতেই চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে।

পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে ৩ মার্চ সকালে সাড়ে ১০টার দিকে মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় তাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি ঘটলে ৩ মার্চ রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক।

মাহমুদের ছোট ভাই বুলবুল আহম্মেদ জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) তার ভাইয়ের চিকিৎসা চলছিল এবং তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তিনি ১১ নম্বর শয্যায় ভেন্টিলেশনে ছিলেন।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে ১২ নম্বর শয্যার ভেন্টিলেশন সিস্টেম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় ওই ওয়ার্ডের একজন বয় আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। নেভাতে না পারায় এক পর্যায়ে আগুন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে আইসিউর সকল রোগীকে তাদের স্বজনরা টেনে হিচড়ে বের করেন এবং পাশের সিসিউতে নিয়ে যার যার মতো অক্সিজেন দেয়। তিনিও তার ভাইকে আইসিইউ থেকে বের করে সিসিউতে নিয়ে যান কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পান না। আগুনে না পুড়লেও অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন তার ভাই।

মাহমুদের আরেক ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘আমাদের আট ভাই-বোনের মধ্যে মাহমুদ ভাই ছিলেন চতুর্থ। আর ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে একটা কালো ছায়া নেমে এল। তার সংসারে স্ত্রী, একটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে। তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে আল্লাহ জানেন।’

তিনি জানান, দুপুরে তার ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হয় এবং জানাজা শেষে বাদ আসর কুমুদনগরের ব্যাপারীপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর