ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় একটি হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।
শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, এই হামলা চালিয়েছেন মামুনুলের অনুসারীরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, মামুনুল হককে নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস আপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডীপুরসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে মামুনুল হকের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ও লুটপাট চালায়।
গ্রামের বাসিন্দা রন্টু দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘরের সবকিছু লুটপাট করা হয়েছে। আমরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছি প্রাণ বাঁচাতে।’
আরেক বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, ‘আমাদের কী দোষ, আমরা কী করেছি? আমাদের উপর এমন অত্যাচার কেন? ঘরের মন্দির থেকে শুরু করে সব ভেঙেছে তারা।’
হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, ‘কয়েক হাজার মানুষ এসে হঠাৎ গ্রামে হামলা, লুটপাট চালায়। আমাদের অনেকের দেবতাঘরও ভাঙচুর করেছে। লুট করেছে ঘরবাড়ি। এমন ঘটনা একাত্তরেও ঘটেনি।’
তিনি জানান, দিরাইয়ের নাচনি, চণ্ডীপুর, সন্তোষপুর, সরমঙ্গল ও শাল্লা উপজেলার কালিমপুর গ্রামের লোকজন এই হামলা-লুটপাট চালায়।
শাল্লার কৃষক আন্দোলনের নেতা অমরচান দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজ সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাম নোয়াগাঁওয়ে কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গ্রামবাসী পালিয়ে গেছে। অসাম্প্রদায়িক নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে এমন ঘটনায় আমরা হতবাক।’
এ ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ওসি নাজমুল।
হামলার ঘটনায় কাউকে এখনও আটক করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মবর্তা আল মুক্তাদির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অতর্কিত হামলায় ৬০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।'
গত সোমবার দিরাইয়ে আসেন মামুনুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করেন সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক নানা কথা উল্লেখ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই।
এর জেরে মামুনুলের সমর্থকরা ৬০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ওই রাতেই আপনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে হেফাজত নেতার অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।