মজমপুর গেট এলাকা থেকে কুষ্টিয়া শহরের দিকে কিছুদূর গেলেই পাঁচ রাস্তার মোড়। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য। কিন্তু গত বছর ৫ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে সেই ভাস্কর্যের একটির মুখায়ব ও তর্জনী ভেঙে ফেলা হয়। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় তোলপাড়।
হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা সাতই মার্চের ভাষণরত ভাস্কর্যটি মেরামত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছে তিনটি ভাস্কর্যের কাজ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অভিবাদন গ্রহণ ও ছয় দফা পাঠরত অবস্থার দুটি ভাস্কর্যই নির্মাণ শেষ হয়েছে। শিগগিরই হবে উদ্বোধন।
শহরের দিকে যেতেই সামনে পড়ছে সাতই মার্চের ভাষণদানরত অবস্থার প্রতিকৃতি। এই ভাস্কর্যটিই প্রথমে বসানো হয়। এর নিচে পাথরে খোদাই করে সাতই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম... জয় বাংলা’ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
- আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর
এর ডান পাশে বসানো হয়েছে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও মনসুর আলীর প্রতিকৃতি। তার নিচে খোদাই করে লেখা, ‘সেই রক্তের ঋণ কোনো দিন ভুলব না সেই অবদান।’
তেমনি থানা মোড় থেকে যারা পাঁচ রাস্তার দিকে আসছেন, তাদের চোখে পড়ছে সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যটি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় অভিবাদনের জবাব দেয়ার প্রতিকৃতি।
এর নিচেই আছে বঙ্গবন্ধুর ছোট আকারের আরেকটি প্রতিকৃতি। সেখানে দেখানো হয়েছে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু।
মূল তিনটি ভাস্কর্যের আরেকটি গড়াই নদীর দিকে মুখ করা। এই ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা পাঠরত অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর নিচে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানান প্ল্যাকার্ড-সংবলিত দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভাস্কর্যটি নান্দনিক লোহার খুটি ও চেইন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির মোহাম্মদ কাদেরী সবু বলেন, ‘এই ভাস্কর্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। যতবার বাড়ি থেকে বের হই বঙ্গবন্ধুকে দেখি। আজকের তার জন্মদিনে ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছি।’
জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক ড. আমানুর আমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকে শহরের সৌন্দর্য এবং ভাবগাম্ভীর্য বেড়ে গেছে।’
ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় তিনি পৌর মেয়রকে ধন্যবাদ জানান।
পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। সে অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকার এই কাজ পান ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তাকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়।’
পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভাস্কর্যের সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করছি।’
গত বছর ১৩ নভেম্বর শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাস্কর্য সাতই মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি বসানোর কাজ। ভাস্কর্যটি স্থাপনকাজের শেষের দিকে ৫ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে হাতুড়ি দিয়ে এটি ভেঙে ক্ষতিসাধন করা হয়।
পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে পুলিশের স্থাপন করা কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। আর ফুটেজ পর্যালোচনা করে ৭ ডিসেম্বর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে চরমোনাইয়ের পীরপন্থি মাদ্রাসাটির দুই ছাত্র ও দুইজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।