কুড়িগ্রামে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মিন্টুর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করেছে দুর্বৃত্তরা।
গুরুতর অবস্থায় আতাউর রহমান মিন্টুকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের কাঁঠালবাড়ী এবং শহরের জিরো পয়েন্ট শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। এতে ভোগান্তির শিকার হন এ পথে চলাচলকারীরা।
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, আতাউর রহমান মিন্টু দুপুরে ওই এলাকায় আসলে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে মিন্টুর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তার দুই পায়ের হাঁটুর নিচে কোপানো হয়। মিন্টুর চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান শফিকুর ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, মিন্টুকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। তার ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাঁহাতের কবজিও বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে। দুই পায়ের হাঁটুর ঠিক ওপরে রগ কেটে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর তার জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
আহত মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজারহাট উপজেলার সিনাই বাজারের পাশে আমার মাছের প্রজেক্টে যাচ্ছিলাম। এ সময় পথ আটকে সোহেল, মামুন, বাঁধন, রুবেলসহ অনেকেই আমার ওপর হামলা করে।’
‘আমি সাবেক এমপি জাফরের রাজনীতি করি। সাত-আট মাস আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের গ্রুপের কর্মী বাঁধনকে কে বা কারা মেরে আহত করে। কিন্তু তারা ভাবে আমার নেতৃত্বে তাকে মারা হয়েছে। এর জেরে এই হামলার ঘটনা। আমি জিডি করেছি পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
আহত আতাউর রহমান মিন্টু ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে।
মিন্টুর বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা অনেক দিন ধরেই আমার বাড়িতে হামলা করে আসছিল। আজ তারা আমার ছেলেকে মেরেই ফেলছিল। আমি এর বিচার চাই।’
চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় আনা হচ্ছে মিন্টুকে
হামলার বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাকিব বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মিন্টুর নেতৃত্বে স্থানীয় যুবক বাঁধনের ওপর হামলা হয়েছিল। সেই শত্রুতার জের ধরে আজকের ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
একই কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আজকের ঘটনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সন্ত্রাসী। তারা আগে একসঙ্গেই চলাফেরা করত।
‘কিছুদিন আগে তাদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। বাঁধনও হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুশয্যায় ছিল। তারই জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তবে জেলা আওয়ামী লীগ কোনো সন্ত্রাসীর পক্ষে নয়। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজু সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আহত মিন্টুকে গুরুতর অবস্থায় রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।