৭১ বছর বয়সী মুনছুর আলীকে হতভম্ভ হতে হয়েছে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে এসে। দিব্বি হেঁটে চলা মানুষটি জানতে পেরেছেন তিনি ‘মৃত’। এখন জীবিত প্রমাণ করতে হলে তাকে আবেদন করতে হবে।
এই কার্ডটির জন্য মনছুর আলীর বয়স্ক ভাতা আটকে আছে। ভাতার টাকা এখন মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে আসে জানতে পেরে এই অ্যাকাউন্ট করতে চান। এ জন্য তিনি স্মার্টকার্ডটি পেতে মরিয়া ছিলেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমোড়া ইউনিয়নের কোদাইলকাটি গ্রামের বাসিন্দা এই প্রবীণ মানুষ। বাড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস।
রোববার তিনি সে অফিসে কার্ড আনতে গিয়ে হতভম্ভ হয়ে পড়েন।
তিনি যখন নিজের নাম জানান, তখন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ কাগজপত্র পরীক্ষা করে তাকে বলেন, ‘এই নামে তো কোনো ব্যক্তি নাই। তিনি তো মৃত।’
মনছুর বলেন, ‘আমি আপনার সামনে। আমি মৃত হব কেন?’
ইউএও বলেন, ‘যারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তাদের ভুলের কারণে এমনটা ঘটেছে। আপনি আবেদন করলে সেটা সংশোধন করা সম্ভব হবে।’
- আরও পড়ুন: ‘মৃত’ ১১ জন হাজির নির্বাচন অফিসে
মনছুর বলেন, ‘তাহলে কি আমি বয়স্ক ভাতার টাকা পাব না?’
এ কথা বলে হতাশ হয়ে বাসায় চলে আসেন।
পরদিন বাড়িতে গিয়ে পাওয়া গেল মুনছুর আলীকে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই বলেন, ‘বাবা, তাহলে কি আমার বয়স্ক ভাতার টাকা আর পাব না?’
তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতার ট্যাকা এখন থেকে মোবাইল দেবে। এর লাইগি আমি বিকাশ খোলার জন্য স্মার্ট কার্ড তুলতে উপজেলায় গিছিলাম।
“তারা আমাকে বুললো, ‘আপনার কার্ডে দেওয়া আছে আপনি মৃত’। আমাকে নাকি, কী যেন করতে হবে। আমি মুর্খো মানুষ বাবা। আমি তা কীভাবে কইরব, আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।”
মুনসুর আলীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ৫৭১৪৭৬৩৪৫২৩১৭। তার জন্ম তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০। তার পরিবারের কেউ স্থানীয় প্রশাসনে তার মৃত্যুর সংবাদ দেয়নি। তাহলে কে এই কাজটি করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ৫ নম্বর মটমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহের জন্য যারা নিয়াজিত ছিলেন, তারা ব্যাক্তি পরিচয় না জেনে অনেক সময় নিজের মনগড়া তথ্য দিয়ে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
- আরও পড়ুন: টিকার নিবন্ধন করলেন সেই ‘মৃত’ শিক্ষক
‘এমন অনেক ভুলের কারণে জীবিত ব্যক্তিকে খাতাকলমে মৃত বলে তথ্য সরবরাহ করেছেন। যার কারণে জীবিত থেকেও জাতীয় পরিচয়পত্রে অনেকে মৃত হয়ে আছেন।’
চেয়ারম্যান জানান, এই ধরনের ঘটনা আগেও হয়েছে তার এলাকার। উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামের আবেদ আলী নামের এক স্কুল শিক্ষক এর ক্ষেত্রেও এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে। তিনি নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে আবেদনও করেছেন।
উপজলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজও জানান, জীবিত মানুষকে হিসেবে মৃত দেখানোর ঘটনা আরও ঘটেছে।
তিনি বলন, ‘আমি গাংনীতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি এমন জটিলতায় পড়েছি। তবে সংশোধনের জন্য আবেদন করা হলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’
সম্প্রতি লালমনিরহাটেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে একজন স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১১ জন জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ কারণে তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এদের একজন আদিতমারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়। তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে মৃত দেখিয়েছে লালমনিরহাট নির্বাচন অফিস। তার তথ্য সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক।
বিষয়টি জানতে পেরে সংশোধনের জন্য ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের ফরম পূরণ করেন এই শিক্ষক। কিন্তু সেই ভুল সংশোধন হচ্ছিল না।
এ নিয়ে গত ১ মার্চ নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর ভোটার তালিকায় নাম উঠে। এরপর তিনি করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারেন।