বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে এবার আদালতে মামলার প্রস্তুতি

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২১ ২২:৪৯

‘থানার পুলিশ মামলা না নিলে আমরা কোর্টে (আদালত) মামলা করব। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। তার পরও আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইব।’

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ফিরিয়ে দেয়ার পর এবার আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংঘর্ষে নিহত আলাউদ্দিনের পরিবার।বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে শ্রমিক লীগ নেতা মো. আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় কাদের মির্জার বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলার আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন নিহতের স্বজনরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রাখলেও সে মামলা নেয়নি পুলিশ।শনিবার দুপুরে উপজেলার চর ফকিরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চর কালী গ্রামের বাড়িতে আলাউদ্দিনের কুলখানির অনুষ্ঠানে তার ছোট ভাই এমদাদ হোসেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, মামলার আবেদন নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন তারা।আলাউদ্দিন চর ফকিরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চর কালী গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে। তিনি এই ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন।এমদাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইকে কাদের মির্জার লোকজন তার উপস্থিতিতে পৌরবভন থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি কাদের মির্জাসহ ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে এজাহার লিখে দুই দিন কোম্পানীগঞ্জ থানায় গিয়েছি মামলা করতে। এজাহারে কাদের মির্জার নাম থাকায় পুলিশ আমার ভাইয়ের হত্যার মামলা নেননি। থানার ওসি জাহেদুল হক রনি বলেছেন, এজাহার থেকে কাদের মির্জার নাম বাদ দিলে মামলা নিবেন।’এখন কী করবেন- এমন প্রশ্নে নিহত আলাউদ্দিনের ভাই বলেন, ‘থানার পুলিশ মামলা না নিলে আমরা কোর্টে (আদালত) মামলা করব। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। তার পরও আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইব।’কাদের মির্জাকে গ্রেপ্তারের দাবিকাদের মির্জাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।এতে বলা হয়, ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খাঁনের ওপর নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ গত ৯ মার্চ প্রতিবাদ করলে সেই সভায় মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে সমাবেশে হামলা চালানো হয়। ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শ্রমিক লীগ কর্মী মো. আলা উদ্দিনের নৃশংস হত্যার মাস্টারমাইন্ড মির্জাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।

হত্যাচেষ্টার অভিযোগ কাদের মির্জার

কাদের মির্জা অভিযোগ করেছেন, তাকে হত্যার চেষ্টা চলছে। অনুসারী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ তুলে বসুরহাট পৌরসভায় সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই।কাদের মির্জা বলেন, ‘এমপি নিজাম ও একরাম চৌধুরীর অস্ত্র আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। তারপরে গতকাল রাতে একরাম চৌধুরীর বাড়িতে নিজাম হাজারী আর একরাম চৌধুরীর নির্দেশে আমাকে হত্যা করার জন্য সেখানে বৈঠক করে। আমার এখানে আবারও হামলা করার তারা একটা প্রক্রিয়া করতেছে।‘গতকাল থেকে আবার নতুন করে আমার অনুসারী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার হচ্ছে। সারা রাত আমার প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ ও সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজন হামলা করছে। অনেক পরিবারকেও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।’এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি না। আমি আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। তবে আমার অনুসারী নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছে।’নোয়াখালীর ঘটনাপ্রবাহ তদন্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে কমিটি করা হয়েছে, সেটাকে একপেশে আখ্যা দেন কাদের মির্জা। বলেন, ‘তারা তো একটা সন্ত্রাসীদের মদত দিচ্ছে। তাদের থেকে সঠিক তথ্য দল পাবে না।’পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবিও জানান কাদের মির্জা। বলেন, ‘যদি নোয়াখালী থেকে করে তাহলে প্রভাবিত হবে। আর না হলে এনএসআই, ডিজিএফআই আছে তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করে যদি আমি এবং আমার অনুসারী যারা আছে অপরাধারের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আমার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’তদন্তভার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও নোয়াখালী অঞ্চলের নেতা সুজিত রায় নন্দীর মতো নেতাদের হাতে দেয়ার দাবি জানিয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘ওনাদের তদন্তে যদি আমি দোষী সাব্যস্ত হই, আমার দলের নেতা-কর্মী দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে’ মুখ কিছুতেই বন্ধ হবে না উল্লেখ করে বসুরহাটের মেয়র বলেন, তিনি ‘সত্য’ বলেই যাবেন।কাদের মির্জা বলেন, ‘যতক্ষণ আমার এক ফোঁটা রক্ত আছে, আমি এখান থেকে সরব না। আমি এটাতে আছি। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলব। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। আমি অন্যায়-অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। এটা কার বিপক্ষে যায়, কার বিরুদ্ধে যায়, এটা আমার জানার বিষয় নয়।’একরামুল যা বলছেনকাদের মির্জার অভিযোগ নাকচ করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমি এলাকার বাহিরে। কাদের মির্জা তাকে হত্যা করার জন্য আমার বাড়িতে যে পরিকল্পনা হয়েছে বলে দাবি করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য। এটি তার কল্পনাপ্রসূত বচন।’বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনের সময় থেকে নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কাদের মির্জার নানা মন্তব্যে গত কয়েক মাস ধরে নোয়াখালীর রাজনীতি উত্তপ্ত। শুরুতে কারও নাম উল্লেখ না করলেও পরে মির্জা কাদের জানান, তার এসব বক্তব্য নোয়াখালী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। পরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এমপি নিজাম ও একরাম চৌধুরীর সঙ্গে কাদের মির্জার বিরোধ। এসবের মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও মির্জা গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির নামের স্থানীয় এক সংবাদিক।সাংবাদিক হত্যা ও দলের মধ্যে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে ২৪ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ।এসব পদক্ষেপে কাদের মির্জা ও তার বিরোধী গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা কমেনি, বরং বেড়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন শ্রমিক লীগ নেতা আলাউদ্দিন। এতে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১৩ জন।

এ বিভাগের আরো খবর