বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্ষণ মামলায় জামিন: এবার শিশুটিকে তুলে নিয়ে ‘বিয়ে’

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২১ ১৯:৩৯

মেয়েটির মা বলেন, ‘মোর আত্তা (আত্মা) ফাটি যাবানাকছে। মেয়েটার কী করিল। বয়স হয় নাই। ছোট ছোল। নাবালক। ফাইবে (পঞ্চম শেণি) পড়ে। সেই মেয়েক আনারুল জোর করে নিয়ে যায়া যে কোনটে থুচে।’

এক বছর আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণের মামলায় আনারুল ইসলাম নামের এক যুবক কারাগারে ছিলেন।

১৩ মাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার সেই শিশুছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিয়ের দাবি করছেন আনারুল। তবে মেয়েটির স্বজনদের অভিযোগ, ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে তাকে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছেন আনারুল।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ৭ জানুয়ারি ওই ছাত্রীকে অপহরণ করেন আনারুল। এরপর গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালীর একটি বাড়িতে তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। অভিযোগ পেয়ে ১০ জানুয়ারি ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার এবং আনারুলকে আটক করে পুলিশ।

একই দিন সুন্দরগঞ্জ থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন মেয়েটির বাবা। এরপর থেকে কারাগারে ছিলেন আনারুল। জামিনে বেরিয়ে এসে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সেই কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান আনারুল ও তার সহযোগীরা।

ছাত্রীর দিনমজুর বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছেন আনারুল। এরপর কোনো ধরনের রেজিস্ট্রি ছাড়াই মেয়েটিকে বউ বলে দাবি করছেন। কিছু বলতে গেলে, তাদের ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।আরও পড়ুন: মেয়ে জন্ম দেয়ায় ঘর থেকে বিতাড়িত মা

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, আনারুল ১০ বছর আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। এসব কারণে বিয়ের পরের বছর আনারুলকে তালাক দেন তার স্ত্রী।

ছাত্রীর ভাই বলেন, ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে আনারুল তার বোনকে তুলে নিয়ে গেছেন। এখন বলছেন তাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তার বোনের বয়স মাত্র ১৫ বছর। আর আনারুলের বয়স ২৯ বছর।

মেয়েটির মা বলেন, ‘মোর আত্তা (আত্মা) ফাটি যাবানাকছে। মেয়েটার কী করিল। বয়স হয় নাই। ছোট ছোল। নাবালক। ফাইবে (পঞ্চম শেণি) পড়ে। সেই মেয়েক আনারুল জোর করে নিয়ে যায়া যে কোনটে থুচে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কলি (বলি) আনারুল হুমকি দেয়। ডাংগাতে (মারপিট) আসে। চেংরা-পেংরা (মাস্তান) দিয়ে ভয় দেখায়। আমরা ওর (আনারুল) বিচার চাই। মেয়েটাক ফিরত চাই।’

জানতে চাইলে আনারুল ইসলাম বলেন, ‘তাকে (ছাত্রী) জোর করে তুলি আনি নাই। মেয়ে নিজেই বাড়িত আসছে। এর আগেও মেয়েটাই আসছিল। উলটা মামলা দিয়া ১৩ মাস জেল খাটাইছে। এখন মেয়েটাকে বিয়ে করছি। সংসার করতেছি।’

১৫ বছরের ছাত্রীকে বিয়ে করলেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিয়ে তো পড়াই নাই। রেজিস্ট্রি করি নাই। মেয়েটা বাড়িত আসছে। তাক কী ফেলাই দেব।’আরও পড়ুন: মেয়ে জন্মানোয় বাড়িছাড়া: প্রথম স্ত্রী তালাক সন্তান না আসায়

তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক বিক্রির অভিযোগে থানায় একাধিক মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আনারুল উত্তেজিত হয়ে থানা-পুলিশকে উদ্দেশ করে গালি দেন। সেই সঙ্গে মেয়ের পরিবারকে দুষতে থাকেন।

তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার বিষয় নিয়ে বেশি নাটানাটি (খোঁজ) করবেন না। আমার নামে মামলা আছে। আরও খাব।, খাতেই থাকব। তাতে আপনার কী!’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নামে মাদকের দুটে মামলা আছে। তবে জেলে যাইনি। আর বিয়ে করছি-চেহারা দেখে। বয়স দেখে না। আর রেজিস্ট্রি ওই পর্যন্তই।’

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মোকলেছুর রহমান সরকার জানান, ‘আনারুলের বিরুদ্ধে থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকবার তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। একটি মামলায় তার নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় জামিনে রয়েছেন আনারুল। নতুন করে আবার অপহরণ হয়েছে, এ নিয়ে মেয়েটির পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর