দিনাজপুর সদরে ১৩ বছর বয়সী ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শহরের পুলহাটের কাশিমপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রবিউছ সানী নামে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
রবিউছ সানীর বাড়ি জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার গলাহার গ্রামে।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার রাতে শিশুটির বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ৫ মার্চ রাতে রবিউছ সানী তার ছেলেকে বলাৎকার করেন। ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ভীতিও দেখান। এরপর ১১ মার্চ শিশুটি মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায়।
এরপর শিশুটির বাবা ওই মাদ্রাসায় গিয়ে কমিটির সদস্যদের বিষয়টি জানান। উপস্থিত লোকজন ওই শিক্ষককে মারধর করেন। পুলিশ গিয়ে রবিউছ সানীকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে শিশুটির বাবার করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওসি আরও জানান, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও তিন ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ আছে। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হবে।
এর আগে কুমিল্লায় একটি কওমি মাদ্রাসায় ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগ করার পর ১৪ নভেম্বর জেলার দেবীদ্বার উপজেলার নিউমার্কেট এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল নূর মাদ্রাসারি শিক্ষক ও ক্বারি মো. শাহজালাল মাঝিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই প্রতিষ্ঠানে ভুক্তভোগী ছেলেকে না পড়িয়ে নিয়ে এসেছেন বাবা। কেবল মাদ্রাসা নয়, ছেলেকে নিয়ে জেলা ছেড়ে চলে গেছেন ওই বাবা।
মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই শিক্ষক কর্তৃক বলাৎকারের শিকার হয়। এসবের খুব কমই সংবাদমাধ্যমে আসে। লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে বিষয়গুলো অনেকেই এড়িয়ে চলেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসের হিসাব তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন জানিয়েছিল, এক মাসে শুধু কওমি মাদ্রাসাতেই ৪০ ছেলেশিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয় দুইজনের। লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে আরও এক শিশু।
সংগঠনটি জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তারা জানায়, চেপে যাওয়া ঘটনা আরও বেশি।
‘মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনে মৌলভি সাহেবদের সম্মান কমছে’ বলে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আজকে মৌলভি সাহেবেরা কেন যৌন নির্যাতনের সাথে যুক্ত হবেন? এতে সম্মান কমছে।’