‘গ্রামের স্কুলে সব সময় ফার্স্ট গার্ল ছিল হাফসা ইসলাম। তারপর গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল। হাফসা পড়া-শোনায় যেমন ভালো ছিল, তেমনি ছিল বিনয়ী। আমরা চাচী হলেও আমাদের মায়ের মতো সম্মান করতো। বেশিরভাগ সময় ও পড়ার টেবিলেই থাকতো। সাজানো গোছানো এই পড়ার টেবিলে আর বসা হবে না ওর।’
এ সব কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তার চাচী জান্নাতুল ফেরদৌস।
হাফসা ফেনীর হলি ক্রিসেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়ত। তার বোন মরিয়ম ইসলাম সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মা মেহেরুন নেছা গৃহিণী। বাবা মাহবুব ইসলাম সৌদি আরব প্রবাসী।
মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য মেহেরুন নেছা ফেনী শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শফিক ম্যানশনে ভাড়া থাকতেন। গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে ঘরের ভেতর চুলা থেকে বের হওয়ার গ্যাসে আগুন ধরে যায়। এতে দুই মেয়েসহ দগ্ধ হন তিনি।
চিকিৎসা শেষে মরিয়মকে ৬ মার্চ ছেড়ে দেয়া হয়। তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মেহেরুন নেছা ও হাফসাকে রাখা হয় রাজধানীর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সেখানে হাসফার মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার দুপুরে মারা যান তার মা মেহেরুন নেছা লিপি।
হাফসার দাদা আবুল কাশেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে মাহবুব ইসলামের সাজানো বাগান শেষ হয়ে গেল। স্ত্রী-মেয়ে চলে গেল। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দেয়।
‘আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানার করের হাট ইউনিয়নের ছত্তুয়া গ্রামে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য ফেনী এসেছিল।’
আরও পড়ুন: ফেনীতে বিস্ফোরণ: মায়ের পর চলে গেল মেয়েও