বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দুর্দিনের বন্ধু, সুদিন দেখা হলো না

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২১ ২২:৩৫

করোনা মহামারির প্রথম পর্যায়ের প্রায় পুরোটা সময় নিজ সংসদীয় এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তিনি নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিদায় নিলেন।

করোনায় সে এক দিন গেছে মানুষের। ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। এটা ধরা, ওটা ছোঁয়া মানা। কাজকর্ম সব বন্ধ। সে বড় দুর্দিন। গত বছরের এই সময়টা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে সারাদেশের মানুষের।

সিলেট জেলায় ছয় আসনে সাংসদ ছয় জন। পাঁচ জনই তখন ঢাকায়। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল একজন। করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ের প্রায় পুরোটা সময় নিজ সংসদীয় এলাকায় ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।

কেবল এলাকায় ছিলেনই না, সেই দুর্দিনে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গেছেন তিনি। বিনামূল্যে নিত্যপণ্যের দোকান বসিয়েছিলেন। যেখান থেকে টাকা ছাড়াই নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যেতে পেরেছে মানুষ। এছাড়া কেউ মোবাইল ফোনে চাহিদার কথা জানালেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিজ নেতাকর্মীদের দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। করোনায় চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা এবং দেশে টাকা পাঠাতে না পারা প্রবাসীদের পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন এই সাংসদ।

এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে করোনাকালের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, যার ডাকনাম কয়েস। করোনার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখন অতীত। দেশে করোনার টিকা এসেছে। এবার সুদিন ফেরার প্রত্যাশা। করোনামুক্ত পৃথিবীতে শ্বাস নেওয়ার অপেক্ষা। তবে সেই সুদিন আসার আগে নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কয়েস। বৃহস্পতিবার দুপরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। গত ৮ মার্চ তার করোনা শনাক্ত হয়।

সিলেট-৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা) আসনে টানা তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন কয়েস। ২০০৯ সালে সংসদে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিল উত্থাপন করে আলোচনায় আসেন কয়েস। তবে সবকিছু ছাপিয়ে করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। আর বৃহস্পতিবার চলে গেলেন সকল আলোচনা-সমালোচনার উর্ধ্বে।

তার নির্বাচনি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে গত বছরের ২২ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় চলে আসেন কয়েস। এরপর সাধারণ ছুটির মোড়কে লকডাউন থাকাকালীন সময়ে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় এই সাংসদকে।

স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর সাংসদ কয়েস প্রথমে নিজ এলাকার জনগণকে সচেতন করতে প্রচারাভিযান শুরু করেন। এ সময় করণীয় নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক করেন। লকডাউন ঘোষণার পর বিপাকে পড়া মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু করেন। এছাড়া ধান কাটার মৌসুমে নিজ এলাকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটতে মাঠে নামেন তিনি। গত বছর রমজান মাস শুরু হওয়ার পর অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি ইফতারসামগ্রীও পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

করোনাকালে সাংসদ কয়েসের এই মানবিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তার কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছরের এপ্রিলে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয়েছিল সাংসদ কয়েসের। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দুয়ারে গিয়েছিলাম, এখন সেভাবে খাবার নিয়ে জনগণের দুয়ারে যাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ পালন করছি।’

সরকারি বরাদ্দের পাশপাশি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকা সহায়তার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

কয়েস বলেছিলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি মাঠে নেমে কাজ করতে পারেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা কেন পারব না? শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এখন সকল জনপ্রতিনিধিকে মানুষের পাশে থাকা উচিত।’

সেদিন আলাপচারিতায় কয়েস আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন স্কাউট সদস্য হিসেবে নোয়াখালীতে গিয়েছিলেন ত্রাণ নিয়ে। সেই থেকে সব দুর্যোগে ত্রাণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থেকেছেন।

দুর্দিনে পাশে থাকা মানুষটির আচমকা এই বিদায়ে শোকস্তব্ধ তার নির্বাচনি এলাকার মানুষজন।আরও পড়ুন: টিকা নিয়েও করোনায় এমপি মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যু

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, ‘করোনার দুঃসময়ে অনেক সাংসদ নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন না। ব্যতিক্রম শুধু কয়েস। তিনি করোনার পুরোটা সময় এলাকায় অবস্থান করে মানুষকে সহায়তা করেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। আজ তিনিই করোনায় চলে গেলেন।’

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রাখালগঞ্জের প্রবীণ বাসিন্দা আসকর আলী বলেন, ‘করোনার সময়ে খাবারসামগ্রী নিয়ে আমাদের এলাকায়ও এসেছিলেন কয়েস। মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন। যে কোনো প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। আজ এই লোকটিই চলে গেলেন।’

মরদেহ আসবে শুক্রবার

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মরদেহ আগামীকাল শুক্রবার (১২ মার্চ) সিলেট আসবে। শুক্রবার সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে মরদেহ। এরপর বাদ আসর বাড়ির পাশের মাইজগাও মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে অবস্থা বিবেচনায় সময় পরিবর্তন হতে পারে।

১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া কয়েসের বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ জানান, তাকে গত রোববার রাতে সিলেট থেকে নিয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সোমবার সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। বিকালে ফলাফল পজিটিভ আসে। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে করোনার টিকা নেন। টিকা নেওয়ার পর তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না।

কয়েস সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর