কয়েক দিন আগে তার স্কুলশিক্ষক বাবা নিজেরই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেন। এটি তার তৃতীয় বিয়ে। শনিবার নতুন বউকে নিয়ে বাড়ি আসেন। ঘরে উঠতে চাইলে মা ও তিন বোন মিলে বাধা দেন।
এ কারণে তার অন্তঃসত্ত্বা মাকে কিলঘুষি মারেন বাবা। পেটে জোরে জোরে লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় মায়ের; মূর্ছা যান তিনি।
নিজের চোখের সামনে মায়ের এমন বর্বর নির্যাতনের শিকার হওয়ার সেই বর্ণনা দিয়েছেন শাহজাদী মারিয়াম বিনতে শাহান নামের এক কলেজছাত্রী।
নড়াইলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় তিনি আরও বলেন, রক্তক্ষরণে তাদের মায়ের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। দুই বোন মাকে প্রথমে নিয়ে যান নড়াইল সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন গভীর রাত। অ্যাম্বুলেন্সে করে মাকে নিয়ে যান খুলনা মেডিক্যালে। চিকিৎসায় মা তাদের কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
শাহজাদী মারিয়াম বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন বাবা। এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিই। কিন্তু আমরা এখন কোথায় উঠব, আমাদের ভরণ-পোষণ কীভাবে চলবে, তা ভেবে পাচ্ছি না। তা ছাড়া নানাভাবে আমাদের হুমকিধমকি দেয়া হচ্ছে। ভয়ে মামলা করতে পারিনি। আমরা এখন নিরাপত্তা চাই।’
নড়াইলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সোমবার বেলা ১১টা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভা। ছবি: নিউজ বাংলা
শাহজাদী মারিয়ামের বাবার নাম শাহান শাহ সরদার। বাড়ি সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামে। তিনি মাইজপাড়া বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নড়াইল মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া ইউসুফ, জাতীয় মহিলা সংস্থার নড়াইলের চেয়ারম্যান সালমা রহমান কবিতাসহ অনেকে।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ওই তরুণীকে নিরাপত্তা এবং এ ঘটনার উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় সদর থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।