ফেনীতে ভবনে বিস্ফোরণে দগ্ধ মরিয়ম ইসলামকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মরিয়মের মা মেহেরুন নেছা লিপি ও ছোট বোন হাফসা ইসলামকে সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল নিউজবাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
পার্থ শংকর পাল বলেন, ভোরে দগ্ধ মা-মেয়েদের হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে লিপির শরীরের ৪৬ শতাংশ ও হাফসার শরীরের ২৭ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। দুজনেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আর মরিয়মের হাত ২ থেকে ৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় মরিয়ম ও হাফসার ফুফাতো ভাই আরিফুর রহমানের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা রাতে তাদের বাসার গ্যাসের চুলা চালু ছিল। সেখান থেকে গ্যাস লিক করার পর রাতে যখন তারা মশা মারতে ইলেকট্রিক ব্যাট চালু করে তখন সেখান থেকে স্পার্ক হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে।’
এদিকে, ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজমের একটি দল এবং কুমিল্লা থেকে সিআইডির একটি দল ফেনীতে গিয়ে পৌঁছেছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে।
পৌরসভার দক্ষিণ চাড়িপুরের দুলামিঞা সড়কের সফিক ম্যানশন নামের ছয়তলা ভবনটির পাঁচতলায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ফ্লোরে দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন প্রবাসী মাহবুব ইসলামের স্ত্রী মেহেরুন নেছা লিপি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই বাড়ির পাশের ভবনের বাসিন্দা রাজু আহমেদ জানান, রাতে বিকট শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। তখন তিনি বের হয়ে দেখেন ওই ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটটির বারান্দার গ্রিল ও দেয়াল ভেঙে আছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তিনিও ভবনের ভেতরে গিয়ে দেখেন, তিনতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত কক্ষগুলোর জানালা ও দরজা ভেঙে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটটিই।
রাজু বলেন, বিস্ফোরণটি পাঁচতলাতেই হয়েছে। ওই বাসার দরজা, জানালা, আসবাব ভেঙে গেছে। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনই ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার নুরুন্নবী ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।
মেয়র স্বপন মিয়াজী বলেন, ‘বিস্ফোরণে প্রতিটি রুমের দরজা ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। কী কারণে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা জানা না গেলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এসপি নুরুন্নবী বলেন, ‘পিবিআই ও সিআইডির একটি বিশেষজ্ঞ টিম ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আসছে। তারা সঠিক কারণ জানাবেন।’
এদিকে ছেলের বউ ও দুই নাতনির আহত হওয়ার খবরে রাতেই সেখানে গিয়েছেন আবুল কাশেম। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, হাফসা স্থানীয় হলি ক্রিসেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে ও মরিয়ম সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তাদের লেখাপড়ার জন্যই এই এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন লিপি।
এদিকে ভবনটিতে রহস্যজনক বিস্ফোরণের ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। ওই ভবনের অন্য বাসিন্দারাও অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।