কুষ্টিয়ায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে নির্মাণ সরঞ্জাম বহনকারী ট্রেনের ট্রলির সংঘর্ষে মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে।
সদরের মোহিনী মিল এলাকায় শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শাহিন আলী।
এ কারণে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, কুষ্টিয়া বড় রেল স্টেশনের কাছে মিলপাড়ায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে রেলের নির্মাণ সরঞ্জাম বহনকারী চার চাকার পুশ ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। কিছুদূর ঠেলে আনার পর ট্রলিটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে চলে যায়। পরে সেটি আটকে যায় ছয় নম্বর বগিতে। ৬ থেকে ১০ নং পর্যন্ত পাঁচটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে লাইনচ্যূত হয়।
ঘটনাস্থলের অদূরে রেললাইনের পাশে অস্থায়ী ঘরে বাস করেন শাহনাজ বেগম।
তিনি বলেন, ‘সোয়া ১টার দিকে তার ছেলে চিৎকার করে বলে, মা দেখতো ট্রেন পড়ছে মনে হয়। আমিও শব্দ পাই, দৌড়ে বাইরে এসে দেখি ট্রেন টাল খেতে খেতে এসে থেমে গেল।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় খুব শব্দ হচ্ছিল, আর মাটি কাপছিল ভূমিকম্পের মতো।’
ট্রেনটির চালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই জায়গাটিতে আশপাশে যেভাবে ঘরবাড়ি রয়েছে তাতে সামনে কী আছে ভালোমতো দেখা যায় না। তা ছাড়া কোনো ট্রলি আসবে আমার কাছে এমন কোন তথ্য ছিল না। ট্রলিটি প্রথমে ধাক্কা লাগে তারপর আর আমি কিছু বুঝতে পারিনি। পরে আস্তে আস্তে ট্রেন থামিয়ে দিই। পরে বুঝলাম, ট্রলিটি চাপা খেয়ে ইঞ্জিনের নিচ দিয়ে ঢুকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি চাপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা রহনপুর থেকে আসছিল। বগিগুলোতে ভারতীয় গম বোঝাই করা। এটি ফরিদপুর যাওয়ার কথা।’
এদিকে বিকেল ৪টা ৫০মিনিটে ঈশ্বরদী থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসে। পাকসী বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে শান্টিং এর কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ ভাল থাকা বগিগুলো টেনে এনে রাখা হয়েছে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে। এখন চলছে রিরেল এর কাজ। সব মিলিয়ে রাত ১০টা থেকে ১১টা লাগতে পারে উদ্ধার কাজ শেষ হতে।’
শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্ধার ও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান আছেন বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আশীষ কুমার মণ্ডল। রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী অন দ্যা স্পট তদন্ত রিপোর্ট নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি রেল বোঝাই পুশ ট্রলি মূল লাইনের ওপর তোলা হয়। এমনটি কথা ছিল না। এ কারণে পার্মানেন্ট ওয়ে ইন্সপেক্টর (পিডব্লিউআই) সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজবাড়ীর দিকে রেলের সেকশনে কাজ করার জন্য এই রেল পুশ ট্রলিতে করে নেয়ার কথা ছিল।’
পোড়াদহ-গোয়ালন্দ এবং রাজশাহী-টুঙ্গীপাড়া দুটি রুটে একটি এক্সপ্রেসসহ মোট চারটি ট্রেন এই পথ দিয়ে দিনে ১০ বার আসা যাওয়া করে।