বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছিনতাইয়ের নগরী কুষ্টিয়া, পুলিশ নিচ্ছে না মামলা

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২১ ১৩:৫৮

অভিনব পন্থায় ছিনতাই হচ্ছে কুষ্টিয়াতে। পুলিশ, র‍্যাব ও সিআইডি পরিচয় দিয়ে একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। তল্লাশির নামে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন ঘটনার শিকার বেশির ভাগই তরুণ- তরুণী।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরে ব্যক্তিগত কাজ শেষে নিজ মোটরসাইকেলে করে গিয়েছিলেন হরিপুর সংযোগ সেতু দেখতে।

সেখানে পৌঁছানোর কিছু পরেই নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেলে করে দুইজন হাজির হয়ে পুলিশ পরিচয় দেয়। সাঈদের কাছে ইয়াবা আছে বলে তল্লাশি করেন তারা। তারপর তার (সাঈদের) মোবাইল, মোটরসাইকেল ও রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে ওই দুইজন দুটি মোটরসাইকেলে চলে যেতে চায়।

এ সময় সাঈদ পেছন থেকে লাফ দিয়ে তার মোটরসাইকেলে উঠে পড়েন। তারপর তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তাকে ফেলে দেয়ার জন্য ছিনতাইকারী চালকও ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু সাঈদ ছিলেন নাছোড়।

একপর্যায়ে বাঁশগ্রাম রাজ্জাক মোড়ে মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে সাঈদ তার মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে দৌড়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে চিৎকার করে লোক জড়ো করে ফেলেন।

এরপর ছিনতাইকারীরা তাদের মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। সাহসিকতার কারণে মোটরসাইকেল ফিরে পেলেও সাঈদ হারান তার স্যামস্যাং জে সেভেন স্মার্ট ফোন। কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ নিয়ে যান তিনি।

সাঈদের করা অভিযোগপত্র। ছবি: নিউজবাংলা

ঘটনাটা শুনে গল্প মনে হলেও এমন অভিনব পন্থায় ছিনতাই হচ্ছে কুষ্টিয়াতে। পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি পরিচয় দিয়ে একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। তল্লাশির নামে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু সাঈদের সঙ্গেই না, এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেক তরুণ-তরুণী।

বৃহস্পতিবারেই আরেকটি ঘটনা ঘটে শহরের আড়ুয়াপাড়ায়। কলেজ শিক্ষার্থী দুই বোন ফারিয়া ইসলাম সাথী ও মারিয়া ইসলাম বীথিকে আসামি হিসেবে হাতকড়া পড়ানোর হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোনে কললিস্ট চেক করতে থাকে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। এরাও নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলে এসেছিল। পরে মোবাইল দুটি নিয়ে চম্পট দেয় তারা। এরাও যান কুষ্টিয়া মডেল থানায়।

কিন্তু এসব ঘটনায় অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবীর।

এর আগে ১ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের পোস্ট অফিসের সামনে থেকে সিআইডি পরিচয়ে মোছাম্মৎ কণিকা নামের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ডোরা খাতুন নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার কাছ থেকে প্রশাসনের সদস্য পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।

একই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জ্যোতি বাড়ি ফেরার পথে কুমারখালী উপজেলার আলাউদ্দিননগর বাসস্ট্যান্ডে নামলে র‌্যাব পরিচয়ে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তার মোবাইল ছিনতাই করে নেয়।

গত ১৪ দিনে প্রায় ১৪টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আছে প্রশাসনের কাছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এইচএসসি পরীক্ষার্থী জেরিন আক্তার ব্যক্তিগত কাজে শহরের হাসপাতাল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একই কৌশলে দুজন এসে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তার ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।

জেরিন আক্তার বলেন, ‘প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে আমার কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছে। পরে বুঝতে পেরেছি। এ বিষয়ে এসপি স্যারের সঙ্গেও সরাসরি কথা হয়েছে।’

জেরিন আক্তারের ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শওকত কবীর বলেন, ‘তিনি র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অথচ এই ঘটনায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ ঘটনায়ও কোনো মামলা বা জিডি নেয়া হয়নি।’

জেরিন আক্তার জানান, পুলিশ তাকে কিছু সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখিয়েছে। সেখানে অপরাধীদের স্পষ্ট দেখা যায়নি।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। ইউনিফর্মধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ করছে। অচিরেই ফল পাবেন।’

কেন মামলা বা জিডি নেয়া হচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে কেস বাই কেস আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর