বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদীভাঙনে নিঃস্ব ২১ হাজার পরিবার

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২১ ১০:৫৯

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১ হাজার ১৭৪টি পরিবার।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ফসলি জমির পাশেই পাটখড়ি, পলিথিন, বস্তা ও কাঁথা দিয়ে তৈরি ছোট্ট একখানা ঝুপড়ি ঘর। সন্ধ্যা নামতেই মর্জিনা বেগম কুপি জ্বালিয়ে খড়ের বিছানা পেতে শুইয়ে দিলেন তিন বছরের ছেলে উমর ফারুককে।

মর্জিনা ইব্রাহিম শেখ খলিলুল্লা ও ছালেহা বেগমের বড় মেয়ে। সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন বাপের বাড়িতে। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর বালাডোবা গ্রামে গেল শনিবার গিয়ে দেখা মিলল পরিবারটির।

ঝুপড়ি ঘরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে থাকছেন ইব্রাহিম ও ছালেহা। সঙ্গে থাকে তাদের ছোট মেয়ে। শীত-গরম-ঝড়-বৃষ্টি সব পরিস্থিতিতেই পরিবারসমেত মাথা গুঁজতে হয় ১২ থেকে ১৪ ফুটের ওই ঝুপড়িতে।

ইব্রাহিম পেশায় খড়ি বিক্রেতা। যেদিন খড়ি বিক্রি হয় সেদিন পেটে ভাত পড়ে। যেদিন হয় না, সেদিন সবাইকে থাকতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে।

ইব্রাহিম জানান, একসময় তার সুদিন ছিল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছিল তার বাপ-দাদার আবাদি জমি ও ভিটেমাটি। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে প্রায় আট বছর আগে সব বিলীন হয়েছে। বছর পাঁচেক আগে নদীগর্ভে হারিয়েছে তার শেষ সম্বল বাড়িটিও। সেই থেকেই এই ঝুপড়িতে টিকে আছে সংসার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বড় বেটা বউ নিয়া জুদা (আলাদা) থাকে টাঙ্গাইলে। ছোট বেটা কাজের খোঁজত তাইও টাঙ্গাইল গেছে। এলা স্ত্রী, দুই বেটি আর নাতি নিয়া এই ছাপড়া ঘরতেই থাকি। খড়ি বেচা হইলে প্যাটত ভাত যায়। আর না হইলে উপাস থাকা খায়। সরকারি কোনো সাহায্য হামরা পাই না।’

ছালেহা বেগম বলেন, ‘টাকার অভাবে জমি কিনবার পাই না। ঘরও তুলবার খ্যামতা নাই। এমন বস্তা, খড়ি, পেলাস্টিক আর খ্যাতা (কাঁথা) দিয়া কোনো রকমে জীবন কাট পাইছি। কোমরের ব্যথা, টাকা বিনাকার ডাক্তার দেকপার পাই না।’

ইব্রাহিমের মতো এই গ্রামের অনেক পরিবারই ব্রহ্মপুত্রে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার তাৎক্ষণিক সহায়তা পেলেও স্থায়ী পুনর্বাসন কার্যক্রম সীমিত। ফলে অনেকেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১ হাজার ১৭৪টি পরিবার।

এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ৮২১টি, ভূরুঙ্গামারীতে ৬০৯টি, নাগেশ্বরীতে ২ হাজার ৪২৬টি, ফুলবাড়িতে ১৮৮টি, রাজারহাটে ৪৩৯টি, উলিপুরে ৫ হাজার ৯০৪টি, চিলমারীতে ৪ হাজার ৫১৯টি, রৌমারীতে ২ হাজার ১৮৩টি ও রাজিবপুরে ৩ হাজার ৮৫টি পরিবার ঘরবাড়ি-জমি হারিয়েছে।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল মন্ডল জানান, গত কয়েক বছরে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এরই মধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড।

জালাল বলেন, এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখন থাকছেন ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। গেল দুই থেকে তিন মাসে ভাঙনের কবলে পড়ছে দুটি গ্রামের প্রায় ৬০০-এর বেশি ঘরবাড়ি, গাছপালা ও কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি।

ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, নদীর ভাঙনে সবাই আতঙ্কে থাকে। কেউ কারও খোঁজ নেয়ার মতো অবস্থায় থাকে না।

আরেক বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ভাঙন ঝুঁকিতে আছে এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাজার মোল্লারহাট ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এমপি, মন্ত্রী হামার এডে কোনো আইসে না খোঁজখবরও নেয় না। হামার আর কাই দ্যাখে।’

নদীগর্ভে যাওয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহুবার বাদশা জানান, ভাঙনকবলিতদের জন্য ইউনিয়নে যে পরিমাণ সরকারি বরাদ্দ আসে, তাতে প্রত্যন্ত এলাকার এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো যায় না।

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ভাঙনে ঘরবাড়িহারা পরিবারগুলোর থাকার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে একটু হলেও শান্তি পেত এসব পরিবার।’

ভাঙন ঠেকাতে কী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হয় জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের কাছে।

তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমেও কুড়িগ্রামে নদ-নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের চেয়ে ধরলা নদীর পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্টে এখন ভাঙছে।

‘মোল্লারহাটে নদীভাঙন রোধে ৫০০-এর বেশি জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছে। এখন ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হবে।’

আরিফুল জানান, ভাঙন ঠেকাতে বাজেট চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই স্থায়ীভাবে কাজ শুরু হবে।

তবে শুষ্ক মৌসুমে ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার তথ্য নেই বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকতা আব্দুল হাই। অন্য সময় নদীর ভাঙনে যেসব পরিবার গৃহহীন হয়েছে তাদের ঢেউটিন, শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের বিষয়ে আব্দুল হাই বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকার গৃহহীনদের জন্য জমিসহ ঘর দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা পেলে যাচাই-বাছাই করে তাদের সেই ঘরের বন্দোবস্ত করে দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর