সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যায়, পুলিশের এক সদস্য ষাটোর্ধ্ব এক রিকশাচালককে স্যালুট দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললেন।
এরপর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তার হাতে গুঁজে দিলেন। এ ঘটনা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী সদরের মোছলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামের সামনে ঘটে।
সেদিন বিকেলবেলা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন নরসিংদী পুলিশ লাইনসে কর্তব্যরত কনস্টেবল সোহাগ হোসেন। একপর্যায়ে তাকে পেছন থেকে ডাক দেন ষাটোর্ধ্ব ওই রিকশাচালক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, কেউ একজন ওই রিকশায় ওঠেন। এরপর অপেক্ষা করার কথা বলে ভাড়া না দিয়েই নেমে যান। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করেন রিকশাচালক। কিন্তু সেই লোক আর ফিরে আসেননি।
রিকশাচালকের হাতে কোনো টাকা ছিল না। এদিকে তার পেটে খিদে। উপায় না দেখে ট্রাফিক সোহাগের কাছে যান। ২০ টাকা সাহায্য চান। বেশ কিছুক্ষণ আলাপের পর সোহাগ তাকে স্যালুট করেন। তার হাতে টাকা গুঁজে দেন। খাবারের একটি দোকানও দেখিয়ে দেন।
এই দৃশ্য রেকর্ড হয় পাশেই থাকা একটি হার্ডওয়্যারের দোকানের সিসিটিভিতে। সেখান থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন স্বপন শেখ নামের পলিটেকনিকের এক ছাত্র। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে এটি ভাইরাল হয়।
ভিডিও আপ করা ছাত্র স্বপন শেখ বলেন, ‘আমি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। বিষয়টা দেখে অবাক হই। পরে আমার ফোনে কানেক্ট করে বড় ভাইয়ের হার্ডওয়্যারের দোকানের সিসিটিভি সফটওয়্যার থেকে ব্যাকআপ চেক করে ভিডিওটা ডাউনলোড করি। পরে ফেসবুকে আপ করি। পরে আরও অনেকে একই ভিডিও ডাউনলোড করে বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করেন। পরে সেটি ভাইরাল হয়।
পুলিশ সদস্য সোহাগ হোসেন বলেন, তিনি পুলিশে যোগ দেন ২০১১ সালের আগস্টে। নরসিংদী পুলিশ লাইনসে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এক বছর ধরে। কোনো সময় সংকট হলে এক্সট্রা ফোর্স হিসেবে তিনি ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন।
সেদিন কী ঘটেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকটাকে দেখে আমার মায়া লাগে। তারপর কথা বলার সুযোগ দিই। এরপর আমি খাবারের জন্য তাকে টাকা দিয়ে সহায়তা করি। এই বয়সেও তিনি নিজের কাজ নিজে করছেন দেখে সম্মান দেখাতে ইচ্ছে হলো। তাই আমি ওনাকে হাত উঠিয়ে সালাম দিই।’
পুলিশের এই মানবিক আচরণে গর্ববোধ করে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘পুলিশ জনগণের সেবক। আমরা জনগণের জন্যই কাজ করি। আমাদের প্রতি অনেকের অনেক ভুল ধারণা কাজ করে। বিষয়গুলো পীড়াদায়ক। বিশেষ করে ট্রাফিকে যারা কাজ করেন, তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এ রকম মানবিক সদস্য আমাদের পুলিশের গর্ব।’