কয়েক বছর থেকে আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানে রয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁ। আমের রাজধানী নামে এরই মধ্যে পরিচিত হতে শুরু করেছে জেলাটি। চলতি মৌসুমে সেই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা আম গাছে শোভা পাচ্ছে মুকুল। এবারও আম উৎপাদনে শীর্ষস্থান ধরে রাখার আভাস দিচ্ছে গাছের মুকুল।
থোকায় থোকায় ঝুলছে গাছে মুকুল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানগুলোতে গাছে গাছে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের আগমনের বার্তা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। গত বছর আম চাষ হয়েছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর জেলায় আমের চাষ বেড়েছে ১ হাজার ৭ হেক্টর জমিতে।
জেলার বেশ কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে আম চাষিদের ব্যস্ততা। গাছের গোড়ায় পানি দেয়া আর মুকুল ধরে রাখার জন্য সহায়ক বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ব্যবহারসহ পরিচর্চার কাজে সময় পার করছেন। চাষিরা আশা করছেন, আমের ভালো ফলন হবে। এখন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত বাগানগুলো।
বাগান পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মুকুল যাতে ঝরে না যায় সে জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে ভিটামিন আর গ্রোথ হরমোন জাতীয় ঔষধ। পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করছেন তারা। এসব ব্যবহার হয় সাধারণত মুকুল আসার আগে, মুকুল পুরোপুরি ফুটলে ও গুটি বাঁধার পর।
নওগাঁয় গাছে গাছে এসেছে আমের মুকুল। ছবি: নিউজবাংলা
নওগাঁর সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামপুর উপজেলায়। বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত এই উপজেলাগুলোয় পানির স্তর নিচে, তাই অন্য কোনো ফসল চাষ তেমন হয় না। শুধুমাত্র বছরে আমন ধান চাষ করা হয় স্বল্প পরিসরে, বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয় চাষিদের। এ কারণে এই এলাকাগুলোতে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে আমের চাষ।
সাপাহার উপজেলার আম চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২৫ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছি। এখন পর্যন্ত মুকুল পড়া বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই। তবে ভালো মুকুল যেন আসে, সেই সঙ্গে মুকুল যেন ঝরে না পড়ে তাই ইসি ফিডল্যাম, সালফার, ইমডাফ্লোপ্রিড, ইমিসাফি নামের সব ঔষধ ব্যবহার করছি।’
পোরশা উপজেলার নিতপুর মাস্টারপাড়া এলাকার আমচাষি মাসুদ রানা বলেন, ’৪০ বিঘা জমিতে এবার আম চাষ করেছি। আমের জাতের মধ্যে রয়েছে আম্রোপালি, নাগ ফজলি, খিরশাপাতি, বারি-১২, লেংড়া ও গোপালভোগ।
‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে আছে। তেমন পোকার আক্রমণ নেই। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে মুকুল যেন ঝরে না পড়ে এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে অগ্রিম কিছু ওষধ ব্যবহার করছি।’
নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা গ্রামের আম চাষি বাদল হোসেন বলেন, ‘এবার ৮০ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১২০টি আম গাছ রয়েছে। প্রতিটি আম গাছের চারা রোপণ থেকে শুরু করে আম উৎপাদন পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি আম গাছ থেকে আম উৎপাদন হয় ১০-১২ কেজি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে শেষ পর্যন্ত, তবে ভালো ফলন হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আম গাছে পোকা-মাকড়ের তেমন উপদ্রব নেই। তারপরও পোকা-মাকড় যেন মুকুলের ক্ষতি না করতে পারে এবং মুকুল যেন ঝরে না পড়ে সে জন্য কৃষি বিভাগ থেকে আম চাষিদের অগ্রিম ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার একটি আম বাগানে এসেছে মুকুল। আবহাওয়া ভালো থাকলে উৎপাদন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা। ছবি: নিউজবাংলা
‘যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ টন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে এবার জেলায় মোট আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২০০ টন।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহারে ৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর, পোরশায় ১০ হাজার ৫০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, মহাদেপুরে ৬২৫ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ৩৩৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, রাণীনগরে ৩৫ হেক্টর এবং নওগাঁ সদর উপজেলাতে আমের চাষ হয়েছে ৪৪০ হেক্টর জমিতে।