বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঝুট ব্যবসা নিয়ে আ. লীগের দুইজনের দ্বন্দ্বে পুলিশের কী স্বার্থ?

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২১ ১৯:২৭

আশুলিয়ার কবিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই নেতার দ্বন্দ্বে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক নেতা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করে আসছিলেন ওই কারখানার সঙ্গে। সেটির দখল নিতে চাইছেন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত আরেকজন। অভিযোগ উঠেছে, তাকে অনৈতিকভাবে সহায়তা করছে পুলিশ। আগে যিনি ব্যবসা করতেন তাকে ফাঁসাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় এক কর্মকর্তা।

সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ মিয়া ও তার ভাতিজা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মৃধা দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটির ঝুট নিচ্ছিলেন বলে দাবি করছেন তাদের স্বজনরা।

তারা বলছেন, পোশাক কারখানাটির ঝুটের ব্যবসা দখল নিতে চাইছেন কলতাসূতির ইউনুস পালোয়ান, যিনি কালা ইউনুস নামে পরিচিত।

এর অংশ হিসেবে ফরিদ মিয়া ও সুমন মৃধার নামে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সুমনকে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সুমনের মা ও স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। রাজি না হওয়ায় তার মাকেও মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়।

তাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আশুলিয়া থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সুমনের পরিবার বলছে, প্রায় চার বছর ধরে আশুলিয়ার কবিরপুরে তাদের বাড়ির সামনেই রোজ ইন্টিমেন্টস লিমিটেড কারখানায় ঝুট ব্যবসা করছেন ফরিদ মিয়া ও তার ভাতিজা সুমন। কারখানা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সেই ব্যবসার দখলে নিতে চাইছেন ইউনুস পালোয়ান। এর অংশ হিসেবে সুমন ও তার চাচার বিরুদ্ধে পরপর দুটি মামলা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ফোন করে সুমনকে থানায় ডেকে নেন উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন কবির। তাকে গ্রেপ্তার দেখান। এরপর অস্ত্র উদ্ধারের নামে আশুলিয়া থানার কয়েকটি গাড়ি যায় সুমনের বাসায়। তল্লাশির সময় পুলিশ পরিবারের সদস্যদের হয়রানি ও লাঞ্ছিত করে। আরও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে এসআই আল মামুন দাবি করেন ৫০ হাজার টাকা।

সুমনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ পাহারায় কারখানার ঝুট বের করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

এই কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়েই হয়েছে দ্বন্দ্ব

আশুলিয়া থানা পুলিশ বলছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে রোজ ইন্টিমেন্টস লিমিটেডের ঝুটসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কারখানার ইলেকট্রিশিয়ান মাঈন উদ্দিনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মারধরের পর ফেলে রেখে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর হয়ে মামলা করেন কারখানার এইচআর অ্যাডমিন অ্যান্ড কম্প্লায়েন্স টিপু সুলতান।

কারখানার স্টোর ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমকে ৩০ জানুয়ারি মারধরের ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি সুমন ও ফরিদ মিয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়।

মামলার ব্যাপারে জানতে কারখানার ইলেকট্রিশিয়ান মাঈন উদ্দিনকে কয়েক দিন ধরে ফোন করা হচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় জানার পরপরই সংযোগ কেটে দিচ্ছেন এবং একপর্যায়ে ফোন বন্ধ করে রাখছেন।

কবিরপুরে মাঈন উদ্দিনের বাড়ি গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

কারাবন্দি যুবলীগ নেতা সুমনের স্ত্রী আয়শা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিনকা (১৪ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় দরজা নক করল। আমি দরজা খুলার সাথে সাথে ধাক্কা মাইরা সাত-আটজন পুলিশ ভিতরে ঢুকল। বলতে গেলে পুরা থানার পুলিশ এখানেই চলে আসছিল। পরে এটা খুলতাছে, ওটা খুলতাছে, ভাঙব- এ রকম হুমকি দেয়।’

তারা টানা তিন ঘণ্টা বাসায় ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসা পুরা তছনছ করে ফেলছে। কিন্তু কিছু পায় নাই। কিছু না পাইয়া বাঁশ কাটার দাও, এটা সবার বাসায় আছে, সাংসারিক জিনিসের পর্যায়ে পড়ে। সেই দাওটা নিয়া তারা দেশীয় অস্ত্র বলেছে। এর সবই মোবাইলে ভিডিও করা আছে।’

সেদিন সুমনকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল অভিযোগ করে আয়শা আক্তার বলেন, ‘মামুন দারোগা ডিরেক্ট টাকা চাইছে। সে বলছে, আমাদের ৫০ হাজার টাকা দেন। না দিলে মামলা দিয়া কিন্তু ওর লাইফ শেষ কইরা দিমু।’

ঘটনার কারণ জানতে চাইলে আয়শা বলেন, ‘আমি যতদূর বুঝতাছি এই ঝুট ব্যবসা। এই মালিকপক্ষ, ওসি (তদন্ত, মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম) মিইলা মনে করেন আমার স্বামীরে এখান থেকে তাড়ানোর জন্য মিথ্যা-ভুয়া মামলা দিছে। কাগজপত্র দেখলে যে কেউ বুঝবে এগুলা ভুয়া মামলা। এ পর্যন্ত দুইটা মামলা দিছে।

‘ভিডিও ফুটেজ আছে দেখেন। একটা ফ্যাক্টরির মাল কি পুলিশ নিয়া যাইব? পুলিশের গাড়ি পাহারা দিয়া লোড গাড়ি (ঝুটবোঝাই ট্রাক) নিয়া যাইতেছে। পুলিশ তো থাকবে নিরপেক্ষ। পুলিশ যদি পক্ষপাতিত্ব করে টাকা-পয়সা খায় তাহলে আমরা কার কাছে সাহায্য চাব? এ সব কিছু করতাছে আশুলিয়া থানার ওসি।’

ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুবলীগ নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে

সুমনের মা গুলজার বেগম এসআই আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনের ছেলের নামে এই ফাইল আমরা তৈয়ার করছি। যদি ৫০ হাজার ট্যাকা আপনারা না দেন আপনের ছেলের সাথে এগুলা দিয়া চালান কইরা দিব। আপনের ছেলে আর জামিন পাইব না।’

তিনি বলেন, ‘মামুন দারোগা বলছে, আমারে অ্যারেস্ট করব, আমারে অপহরণের মামলা দিব। আপনে যদি আমারে টাকা না দেন আগে পরে যত মামলা হইছে সব কিছু সাজাইয়া আপনার ছেলের সাথে আপনেরে দিয়া দিমু।’

শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯নং ওয়ার্ডের সহসভাপতি সুমনের বাবা শফি উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে এখানে ফ্যাক্টরির একটা শ্রমিককে (মাঈন উদ্দিন) পাও ভাইঙা ফালায় থুইছে। পরে আমার ভাই ফরিদ ও ছেলে সুমনের নামে মামলা দিছে। আমরা সেই লোকের কাছে গেছি। সে বলছে, আমার সুমন ভাই ও ফরিদ কাকা আমারে মারতে পারে না। তাদের সাথে আমার কোনোরকম শত্রুতা নাই।’

কারা, কেন এসব করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা চায় না আমরা এখানে ব্যবসা করি। সে জন্য পুলিশ দিয়া হয়রানি করতেছে। কালা ইউনুস ফ্যাক্টরি থাইকা মাল নিয়া যাইতেছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ। পুলিশ খামাখা আমাদের হয়রানি করতেছে।’

অভিযোগের ব্যাপারে ইউনুস পালোয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনে সাম্বাদিক পরিচয় দিছেন। ব্যবসা করি। তাহলে আপনে জানেন ব্যবসা করি, তো করি। অহন আপনে আমার সাথে আরও কিছু জিজ্ঞাস করতে হইলে টেলিফোনে না ফেস টু ফেস জিজ্ঞাস করতে হইব।

‘কথা ভাই আপনেরে বোঝাইতে পারছি? আপনে উত্তর পাইছেন তো? ব্যবসা করি। হ্যাঁ। তারপরে যদি আরও কিছু জিজ্ঞাস করতে চান আপনি আমার সাথে কাইন্ডলি ফেস টু ফেস কথা বলবেন। চা খামুনে, কফি খামুনে।’

পুলিশকে ব্যবহার করে ব্যবসা দখল করেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই কোম্পানি আমার কোম্পানির সাথে পরিচিত। আমাকে কাজ দিছে আমি মাল বার করতাছি।’

রোজ ইন্টিমেন্টস লিমিটেড কারখানার এইচআর অ্যাডমিন অ্যান্ড কপ্লায়েন্স টিপু সুলতান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দ্বন্দ্বটা ঝুট-টুট নিয়ে হইছে সুমন-টুমনদের সাথে। সুমনরা ঝুট আগে নিত। এখন কেউ নিচ্ছে না। তবে এখন ম্যানেজমেন্ট কাকে দিছে আমি জানি না।’

মিথ্যা মামলার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুমনের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা হইছে। প্রথমটা স্টোর ম্যানেজাররে (জাহাঙ্গীর আলম) মারধরের মামলা। প্রথম মামলাটার বাদী আমি না। পরেরটা হলো আরেকটা ছেলেকে (মাঈন উদ্দিন) এখান থেকে তুলে নিয়া কে বা কারা হাত-পা ভাইঙা ফেলছে। যেহেতু ওই ছেলে অসুস্থ ওর পক্ষ থেকে কোম্পানির হয়ে আমি মামলা করছি।’

ঝুট ব্যবসা নিয়ে করা মামলার কপি

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিউজবাংলার প্রতিবেদক আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন কবিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা এত ফোন দিতাছেন ভাই বুঝলাম না। কাহিনী কী কন তো। কাহিনী হওয়ার কথা না। রোজ ফ্যাক্টরিতে যা হওয়ার হইছে, মামলা হইছে। আসামি গ্রেপ্তার হইছে, আসামি জেল খাটতাছে।’

পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আসামির মা তো ওই দিন বাসায় ছিল না। কোর্টে ছিল। এগুলা তো জনগণের সামনে ভিডিও করা আছে। এলাকার লোকজন ছিল, আমাদের ওসি (পরিদর্শক) তদন্ত স্যার ছিল। এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা কে বলে আপনাদের? আপনারা যাচাই-বাছাই কইরা জিজ্ঞেস করবেন।’

আসামিসহ তার বাসায় অভিযানের বিষয়ে বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারে গেছি। অস্ত্র ছিল এই তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্র উদ্ধারে গেছি। অস্ত্র পাওয়া যায় নাই। চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

অভিযান পরিচালনাকারী আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আচ্ছা দেখি, আমরা টোটাল বিষয়টা তদন্ত করে দেখতেছি।’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে সব লিখে একটা অভিযোগ দিতে বলেন। দেখি কী ঘটনা।’

এ বিভাগের আরো খবর