বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভুল চিকিৎসায়’ রোগীর মৃত্যু, মধ্যস্থতায় ধামাচাপার চেষ্টা

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২১ ২৩:০৪

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কথা অকপটে স্বীকার করে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে বলে দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার ধামরাইয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শাহিনা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তার পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্বজনদের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণেই রেহেনার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশকে জানালে ময়নাতদন্তে মরদেহ কাটা-ছেঁড়া করা হবে, এ কারণে তারা অভিযোগ করেননি।

এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কথা অকপটে স্বীকার করে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে বলে দাবি করে।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাংবাদিকরা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ‘আজাহার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ গেলে তাদের সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে সকালে মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

৪৬ বছর বয়সী শাহিনা আক্তার পৌরসভার ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত বেনু মিয়ার মেয়ে। তিনি তার বড় বোনের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

তার বড় বোন ফিরোজা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বইনেরতো পিত্তথলিতে পাথর হইছিল। বোইনে একা একা যাইয়ে ভর্তি হইয়াই এই অবস্থা হইল। আমার বোইনেরে অজ্ঞান করছে। অজ্ঞান অবস্থায় আর জ্ঞান ফিরা আহে নাই বোইনের। আমার বইনের ভুল অপারেশন হইছে, না হলে মরত না। ডাক্তার ভুল অপারেশন করছে। এমনি অন্য লোক নিয়া গেছে আমাগো আত্মীয়স্বজন কাউরে নিয়া যাই নাই। আমরা জানি না। মনে করছে, আমার ভাই-বইনে অপারেশন করবার দিব না, এই জন্যে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজা বলেন ‘না আমরা কোনো অভিযোগ করি নাই। অভিযোগ করলে পুলিশ প্রশাসন হইব। পোস্ট মর্টেম হইব। এই কারণে আমরা করি নাই।’

ফিরোজা বেগমের স্বামী এমদাদুল হক বলেন, ‘আজ থেকে ২০ বছর আগে হ্যার ফুসফুসে অপারেশন হয়। ফুসফুসের অর্ধেক ছিল না। এনাম মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হইছিল। এনাম আর অন্য হাসপাতালেও হ্যার অপারেশন করে নাই। কিন্তু এই হাসপাতালে কীভাবে ডাক্তার অপারেশন করল, সেটা উনি (ডাক্তার) জানেন। হাসপাতালের কেউ আমাদের কিছু বলে নাই, আমরা যারা গার্জিয়ান (অভিভাবক) আছি। পরে শুনছি, ২৫ হাজার টাকা ঠিক হইছিল অপারেশনের জন্য।’

অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মাইনসে কইল, যে রোগী মারা গেছে সে রোগী নিয়া কিছু করলে ভালো কিছু হবে না। আমরা নিজেরাও চিন্তা করি যে আমরা গরিব মানুষ। এ নিয়া দৌড় পাড়াটা বা কাটাছেঁড়া করাটা পছন্দ করি না। অর বিয়া-সাদি হয় নাই। অর কেউই নাই। আমরাই অর দুই ভাই বোনের মতন।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্যার আমাকে বললেন রোগীটা একটু ক্রিটিক্যাল, খেয়াল করবেন। একটা ফুসফুস নেই রোগীর। স্যার আমাকে বললেন, এখানেই থাকেন অপারেশন দেখেন। পরে স্যার অপারেশন শুরু করলেন। আমি ওখানেই দাঁড়ায়া দেখলাম পুরা অপারেশনটা। তো অপারেশন সাকসেসফুল হইছে। আমিতো ভাবছি অপারেশন শেষ। তাই চইলা যাই।

‌এক ঘণ্টা পর আমাকে স্যার ডাকলেন। আমি যেয়ে দেখি এক ঘণ্টা আগে স্যারদের যেভাবে দাঁড়ায় থাকতে দেখছি, তারা ওভাবেই সেখানে দাঁড়ায় আছেন। স্যার আমার দিকে তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না।

তো আমি একটু ঘাবড়ায়া গেলাম যে, এতক্ষণ পরও রোগীর জ্ঞান ফিরে নাই বা স্যাররা এভাবে দাঁড়ায়া আছেন। তখন অ্যানেসথেসিয়ার স্যার ছিলেন উনি বলতেছেন, রোগী রেফার করতে হবে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে, কাগজপত্র রেডি করেন। পরে স্যার নিজেই সব লিখে দিলেন।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে রাত আটটার দিকে হাসপাতালে গেলে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে আপসের চেষ্টা করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের হাসপাতালটির অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা। এমনকি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই আইসিইউ ছাড়াই অপারেশন থিয়েটার কেন চালু রেখেছেন, সে বিষয়ে যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের চেয়ারম্যান সোহেল খান বলেন, ‘উনি গত পরশু দিন আসছিল। তার পেটে পাথর ছিল। একজন সার্জন তার ল্যাপরোস্কোপি করছে। আমাদের এখানে আইসিইউ সাপোর্ট নাই বিধায় আমরা রোগী রেফার্ড করছি এনাম মেডিক্যালে। আইজকা (সোমবার) সকাল ১১টার সময় রোগী মারা গেছে এনামে।’

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর দ্বায়ভার কার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ভাই আমি অবগত না। এই বিষয়টা আমি জানি না। তবে দ্বায়ভার আমার এটা। অবশ্যই জানাটা আমার উচিত ছিল।’

মীমাংসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা পয়সা না। ওনারা আমাদের আত্মীয়ও হয়। আমরা সামাজিকভাবে বইসা কথাবার্তা বলছি। ওনারাও মামলা-টামলায় যাইতে চায় নাই, আমরাও চাই নাই। এজন্য লাশ দাফন-টাফন হইছে। আমাদের সাথে ওনাদের সুসম্পর্ক বিধায় ওনারা লাশ দাফন করছে।’

কোন চিকিৎসক অপারেশন করেছেন এ বিষয়ে বলেন, ‘ওনার নামটা আমি জানি না। নামটা আপনাকে একটু পরে দিচ্ছি।’

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর ই রিফফাত আরা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। ওই ক্লিনিকে আমরা রুটিন মাফিক চারবার পরিদর্শন করেছি। তবে এদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ লাগবে।’

প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন আছে কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‌‘আজাহার ক্লিনিকের এখনও লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। আমরা সুপারিশ করেছি দেয়ার জন্য। ওদের আইসিইউ, সিসিইউ নেই, ওটিতেও সমস্যা ছিল, সেটা কারেকশন সাপেক্ষে ওদের হাসপাতাল অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর