বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মৃত’ ১১ জন হাজির নির্বাচন অফিসে

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২১ ১৮:৫৪

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার আজাদুল হেলালকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আজকে। তিনি ঘটনাস্থলে তদন্তে গেছেন। তিনি এলে কাগজপত্র যাচাই করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

লালমনিরহাটে একজন স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১১ জন জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ কারণে তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তাদের একজন হলেন আদিতনারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি সদর উপজেলার ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়া টেপা গ্রামে। আমাকে ২০১৪ সাল থেকে মৃত দেখিয়েছে লালমনিরহাট নির্বাচন অফিস। আমার তথ্য সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক। আর আমার নাম কর্তনের আবেদন করেন আমার প্রতিবেশী মনোরঞ্জন রায়।’

তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনের জন্য আমি ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের ১২ নম্বর ফরম পূরণ করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশোধন না হওয়ায় অনলাইনে নাম শো করতে ২২ ফেব্রুয়ারি আবার আবেদন করি। আমার নাম শো করছে না।’

তিনি আরও বলেন, ভোটার তালিকায় তার নাম না থাকায় গত সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ ছাড়া কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনের জন্য অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে পারছেন না। তিনি নানা বিড়ম্বনার শিকার।

এ ব্যাপারে তিনি সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করলে ২০১৪ সালের ৩ জুন ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে মর্মে একটি কাগজ তার হাতে ধরিয়ে দেন তৎকালীন লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়া টেপা গ্রামের মৃত হিরম্ব চন্দ্র রায়ের ছেলে লক্ষ্মী কান্ত রায়। তিনি ২০১৪ সালের ৩ জুন মারা গেছেন মর্মে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নাম কর্তনের জন্য আবেদনপত্রে তথ্য সরবরাহকারী একই গ্রামের শ্রী মনমোহন রায়ের নাম লেখা রয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী ধাইরখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোমিনুর রহমান, মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাবুউজ্জামানের স্বাক্ষরিত ওই আবেদনপত্রে তাকে মৃত দেখানো হয়েছিল।

জানতে চাইলে তথ্য সরবরাহকারী শ্রী মনমোহন রায় বলেন, আবেদনপত্রে তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ তিনি এ বিষয়ে কাউকে কোনো তথ্য দেননি।

মোগলহাট ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, নাম কর্তনের আবেদনপত্রে তার স্বাক্ষর ও অফিস সিল জাল করা হয়েছে। ওই গ্রামের লক্ষ্মী কান্ত রায় নামের এক ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছিলেন। হয়তো তার নামের স্থলে জীবিত লক্ষ্মী কান্তর নাম বসিয়েছে নির্বাচন অফিস।

তথ্য সংগ্রহকারী মোমিনুর রহমান জানান, স্কুলশিক্ষক লক্ষ্মী কান্ত রায়কে মৃত দেখানো হয়েছে। ওই নামে হয়তো অন্য কেউ মারা যাওয়াতে এমন সমস্যা হয়েছে।

এ বিষয়ে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাবউজ্জামান বলেন, ‘স্কুলশিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নিয়োগ দেয় উপজেলা নির্বাচন অফিস। সরবরাহকৃত তথ্যের ওপর সুপারভাইজাররা শতকরা ২৫ ভাগ যাচাই-বাছাই করে থাকেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনপত্রে আমরা স্বাক্ষর করে থাকি।’

ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন অস্বীকার করলে তো আর আমার কিছু করার নেই।’

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল জানান, তথ্য সংগ্রহকারীর তথ্যমতে শিক্ষকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। ওই নামে হয়তো অন্য কোনো লোক মারা যাওয়ায় ভুলবশত তার নাম মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি তদন্ত করছি। অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধান হবে।’

জেলা সদরে লক্ষ্মী কান্ত ছাড়াও আরও ১০ জনকে মৃত দেখানোর অভিযোগ রয়েছে জেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে। তারা হলেন মোছা. ফিরোজা বেগম, মো. রুবেল মিয়া, আ. আবুল কাশেম, মো. ইমতিয়াজ হোসেন, মো. শমসের আলী, মোছা. তারজিনা বেগম, মো. সোহরাব আলী, মো. আলী আজগর, মো. আহম্মদ আলী ও মোছা. কোহিনুর বেগম।

মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়া টেপা গ্রামের ৭২ বছরের বৃদ্ধ ও সাবেক সেনা সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আমার স্মার্ট কার্ড নেয়ার জন্য নির্বাচন অফিসে যাই। সেখানে আমার পুরোনো আইডি নিয়ে কম্পিউটারে সার্চ দিলে আমার নামের পাশে মৃত দেখায়। তখন আমি হতবাক হয়ে বলি, আমি যদি মৃত হই তাহলে আপনার সামনে কীভাবে এলাম? তখন উপজেলা নির্বাচন অফিসার আজাদুল হেলাল আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন আমি বিষয়টি দেখছি। এ নিয়ে আজ প্রায় এক বছর হলো কোনো সমাধান হয়নি।’

পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ফিরোজা বেগম জানেনই না তিনি মৃত। তবে স্মার্ট কার্ডও পেয়েছেন। কিন্তু তালিকায় তিনি মৃত।

এ বিষয়ে সোমবার বেলা ১১টায় জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে ২২ ফেব্রুয়ারি আবেদন জমা দিয়েছে যে তিনি মৃত। আবেদন পাওয়ার পর পরই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে উপজেলা নির্বাচন অফিসার আজাদুল হেলালকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আজকে। তিনি ঘটনাস্থলে তদন্তে গেছেন। তিনি এলে কাগজপত্র যাচাই করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর