জাটকা সংরক্ষণ করে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের পাশাপাশি চাঁদপুরের নদীতেও সোমবার থেকে দুই মাসের জন্য মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে।
জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরের ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা-মেঘনায় মার্চ ও এপ্রিলে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেছে দুই মাসের বিরতি শুরু হচ্ছে বলে চাঁদপুরের জেলেরা নৌকা ও জাল গুছিয়ে নিচ্ছেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে রয়েছেন ৫১ হাজার ১৯০ জেলে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত ৪০ হাজার ৫ জনকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে ৪০ কেজি করে চাল।
দুই মাস উপার্জনহীন অবস্থায় এই চালে পরিবারের চাহিদা মেটে না বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন জেলেরা। অনেকে সরকারি এই প্রণোদনা পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাইমচর উপজেলার চরভৈবরী এলাকার জেলে সিরাজ মিজি ও আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়টায় ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও আসলে দেয়া হয় ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে। তা ছাড়া শুধু চাল দিয়েই সংসার চলে না। সন্তানদের লেখাপড়া ও ঋণ মেটাতে গেলে সংসার চলে না বলে জানান তারা।
দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ বলে জাল গুছিয়ে রাখছেন জেলেরা। ছবি: নিউজবাংলাসদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে আব্দুল গফুর ও জসিম খাঁ জানান, সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছেন। অবসরে না হয় জাল ও নৌকা মেরামত করে কাটাবেন। কিন্তু সরকারের সহায়তা যথেষ্ট না বলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই এ সময় মাছ ধরতে যান।
জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা গেলে কেউ আর নদীতে নামত না। এতে জাটকা সংরক্ষণের কর্মসূচি পুরোপুরি সফল হতো।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, ‘এ বছর জাটকা নিধনরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে জেলেদের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালিয়েছি।
‘ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই চার মাস জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হবে। তা ছাড়া ১ হাজার জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে রিকশা, ভ্যান, হাঁস-মুরগি ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হবে।’
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জেলেদের সচেতন করতে চলছে প্রচার। ছবি: নিউজবাংলাতিনি আরও জানান, মাছ ধরা ঠেকাতে নদীতে ২৪ ঘণ্টাই অভিযান চলবে। সরকারের আদেশ অমান্য করে কেউ নদীতে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০০৬ সাল থেকে মার্চ ও এপ্রিলে লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ নদীসীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হয়।
এ কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরের মতলবের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়।