প্রেমের ফাঁদে ফেলে রাজশাহীর এক ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের রাজশাহীর একটি শাখার ব্যবস্থাপককে প্রতারক চক্রের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন রাজশাহীর চারঘাটের মনোয়ার হোসেন, সেলিনা আক্তার ওরফে সাথী, খাইরুল ইসলাম ও পটুয়াখালির রাংগাবালীর তুহিন সরকার। মনোয়ার এই চক্রের প্রধান বলে দাবি পুলিশের।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক শনিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মনোয়ার হোসেন ও সাথী স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ২৬ জানুয়ারি নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম নতুনপাড়া রাণীদীঘি এলাকার একটি ভবনের তৃতীয়তলা ভাড়া নেন। এরপর সাথী গত বৃহস্পতিবার ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে কৌশলে এ বাসায় ডেকে আনেন।
এ সময় পাশের ঘরে লুকিয়ে ছিলেন মনোয়ার, খাইরুল ও তুহিন। একপর্যায়ে তারা সাথীর কক্ষে ঢোকেন। মনোয়ার নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, খাইরুল ডিবি সদস্য ও তুহিন সাংবাদিক পরিচয় দেন।
চাঁদাবাজিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম
মনোয়ার ও খাইরুল ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে নারীসহ গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। পরে খাইরুল হাতকড়া পরিয়ে দেন। মনোয়ার ওই ব্যাংক কর্মকর্তার পেছনে নকল পিস্তল ঠেকিয়ে যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। আর তুহিন হুমকি দেন টাকা না দিলে নারীসহ ওই কর্মকর্তার ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করে দেবেন।
এই পরিস্থিতিতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা তার কাছে থাকা ২৬ হাজার টাকা দেন। এছাড়া পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরও ৪৪ হাজার টাকা এনে দেন। তারপরও তাকে ছাড়া হয়নি।
এদিকে, বিকাশের মাধ্যমে এভাবে টাকা নেয়ায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তার একজন সহকর্মী আঁচ করেন তিনি বিপদে পড়েছেন। পরে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানান। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ডিবি শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার ও ওই চারজনকে আটক করা হয়।
আরএমপি কমিশনার জানান, প্রতারকরা প্রায় এক মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেয়। কিন্তু তারা নিয়মিত বাসায় থাকত না। এই বাসায় তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে ভুয়া ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে ব্ল্যাকমেইল করত।
চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড ও বিভিন্ন পরিচয়পত্র
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে নকল পিস্তল, হাতকড়া, ভুয়া ডিবি জ্যাকিট, ছয়টি মোবাইল সেট, ৯টি সিমকার্ড, বিদেশি নোট, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত চার কপি ছবি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
তা ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।