সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সাবেক প্রধান আমজাদ হোসেন খান। এক ছেলে ও এক মেয়ে তার। দুজনই চিকিৎসক।
নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দেই সময় কাটছিল আমজাদ হোসেন দম্পতির। সেই আনন্দময় জীবনের ছন্দপতন হলো ছুটির দিনের সকালে। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তার ছেলে চিকিৎসক ইমরান খান রুমেলের প্রাণ।
ইমরান সিলেটের উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রভাষক। তার স্ত্রী অন্তরা খান জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিতব্য বিসিএসের পরীক্ষার্থী।
স্ত্রীর পরীক্ষার জন্য তাকে নিয়ে শুক্রবার ভোরে এনা পরিবহনের বাসে সিলেট থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন ইমরান।সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে বাসটি পৌঁছানোমাত্রই সংঘর্ষ হয় লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের সঙ্গে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ইমরান। গুরুতর আহত অন্তরাকে আহত অন্যদের সঙ্গে নেয়া হয় ওসমানী মেডিক্যালে। ইমরানের মরদেহও রাখা হয় সেখানে।
ছেলের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে যান ডা. আমজাদ। যে হাসপাতালে দীর্ঘকাল কাজ করে গেছেন তিনি, সেখানেই দেখতে হলো ছেলের মরদেহ। মর্গের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্বজন ও সহকর্মীরা সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তাকে। নগরের ফাজিল চিশত এলাকায় ডা. আমজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ইমরানের মা। ইমরান-অন্তরার পাঁচ ও দুই বছর বয়সী দুই মেয়েও আছে সেখানে। ঢাকায় যাবেন বলে নানা-নানির কাছে মেয়েদের রেখে যান তারা।
আমজাদের প্রতিবেশী সাবিনা আক্তার বলেন, ‘সকালে ইমরানের বোন ডা. কিন্নরির চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙে। তিনি আমাদের এই দুর্ঘটনার খবর জানান… আমজাদের পরিবার খুবই মেধাবী এবং অত্যন্ত ভদ্র। দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে আছি… ইমরানও খুব নম্র ও ভদ্র ছেলে। এরকম মানুষ হয় না।’
ইমরানদের স্বজন মুমিনুল হক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন ওই বাড়িতে। তিনিও ওসমানী মেডিক্যালের চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় যে আমার পরিচিতজনেরাও হতাহত হয়েছেন তা বুঝতে পারিনি। পরে ইমরানের কথা শুনলাম।’
মুমিনুল বলেন, ‘ইমরানের স্ত্রী অন্তরাও গুরুতর আহত হয়েছেন। এখন আমাদের চাওয়া বাচ্চা দুটোর জন্য হলেও অন্তরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
এই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে দুই বাসের চালকসহ আরও সাত আরোহীর। আহত হয়ে ওসমানী মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অন্তরাসহ ১৫ জন।