সারা শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। খুন্তির ছ্যাঁকা ও ছুরির আঘাত। বাদ যায়নি তার মাথাও। ঢাকার এক চিকিৎসক দম্পতি ১১ বছর বয়সী মেয়ে শিশুটির ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হতদরিদ্র মা-বাবা ছয় মাস আগে তাদের মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন রাজধানীতে, ওই চিকিৎসক দম্পতির বাসার কাজে। ভেবেছিলেন, মেয়েটার অন্তত খাওয়া-পরার অভাব হবে না। সেই আশা ভেস্তে গেল। মেয়ের কপালে জুটল কেবলই নির্যাতন।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মেয়েটিকে তাদের গ্রামের বাড়ির কাছে ফেলে যাওয়া হয়। তাকে দেখে মা-বাবা চিনতেই পারছিলেন না। কী হাল হয়েছে মেয়েটার! গ্রামের বাসিন্দারাও হতবাক।
বাড়ি উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের বাসিন্দা মেয়েটির জেঠিমা নিউজবাংলাকে জানান, ঢাকার শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ট্রমা বিশেষজ্ঞ সিএইচ রবীনের বাসায় কাজ করত মেয়েটি। ছয় মাস আগে তাকে সেখানে পাঠানো হয়।
‘কাজ শুরুর তিন দিন পরই তার ওপর নির্যাতন শুরু করেন চিকিৎসক রবীনের স্ত্রী রাখি দাস। পরে রবীনও তাকে মারধর করেন। এসব কথা তারা এতদিন জানতেন না। মেয়ে এসে সব বলেছে।’
জেঠিমা জানান, চিকিৎসক রবীনের সহকারী বাসু বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেয়েটিবে তাদের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে রেখে চলে যান।
অমানুষিক নির্যাতনে ফেটে গেছে শিশুটির মাথা। ছবি: নিউজবাংলা
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শামসুদ্দোহা তৌহিদ বলেন, ‘মেয়েটির সারা শরীরে ক্ষত। তাকে ছুরি দিয়ে এবং নানাভাবে আঘাত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করা হয়েছে। তার মাথায়ও ছুরির আঘাত করা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তবে শরীরের এই ক্ষত সারলেও, তার মানসিক ক্ষত ঠিক হতে অনেক দিন লাগবে।’
উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান জানান, ‘খবর পেয়ে গভীর রাতে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু ঘটনাটি ঢাকার, সেহেতু কীভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় সেদিকে জোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
এ ঘটনায় চিকিৎসক রবীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ধরেননি।