দাফনের ৯ মাস পর কবর খুঁড়ে তোলা হলো বরগুনার স্কুলশিক্ষক নাসির হাওলাদারের মরদেহ। তার খুলি ও নাকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
স্ট্রোকে মৃত্যুর কথা বলে নাসিরের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু মোবাইল ফোনে তাকে হত্যা পরিকল্পনার কথোপকথনের একটি রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার বরইতলা এলাকায় কবর থেকে মরদেহটি তোলা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা জয়রাজ হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বরজিত কুমারের উপস্থিতিতে কবর খুঁড়ে মরদেহটি তোলা হয়। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দেহাবশেষ মহাখালী ল্যাবে পাঠানো হবে।
বরগুনা সদর থানা পরিদর্শক (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ২০২০ সালের ২৩ মে রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির হাওলাদার নিজ বাড়িতে মারা যান।
স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হয়। এ কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা। কিন্তু নাসিরকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড ১০ ফেব্রুয়ারি ফাঁস হয়।
ওই রেকর্ড পুলিশের কাছে পৌঁছানোর পর রাতেই নাসিরের ভাই আবদুল জলিল সদর থানায় মামলা করেন। এরপর নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার কথিত প্রেমিক রাজু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যার দায় স্বীকার করেন মিতু ও রাজু। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা এখন কারাগারে আছেন।
নাসিরের বাড়ি সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকায়। তিনি গুলবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গ্রেপ্তার ফাতেমা মিতু সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা এলাকার মো. মাহতাব মৃধার মেয়ে। তিনি বরগুনার থানাপাড়া এলাকায় বাবার ভাড়া বাসায় থাকতেন। রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (অপরাশেন) স্বরজিত কুমার জানান, ‘চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১২ ফেব্রুয়ারি বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে মরদেহের ময়নাতদন্তের আবেদন করি। ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের বিচারক ইয়াসিন আরাফাত মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। মরদেহ তোলার পর প্রাথমিকভাবে নাসিরের খুলিতে কালো দাগ ও নাকের সামনের অংশ ভাঙা বলে শনাক্ত করা গেছে।’
তিনি আরও জানান, শিগগির তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।