নিম্নমানের খোয়া দিয়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই চলছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা গিয়ে এ কাজ বন্ধ করে দেয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপের মুখে সটকে পড়েন ঠিকাদার।
অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদাররা রড ঠিকমতো না বেঁধে নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন। ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অবশ্য শুরু থেকেই করা হচ্ছিল। ঠিকাদাররা পুলিশের ভয়ভীতি দেখালে স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যালয়ের ধারেকাছে যাননি।
বিদ্যালয়টিতে তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দোতলা ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৫ টাকা। কাজটি করছে নওগাঁ শহরের ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান ‘মিলন ট্রেডার্স’। কিন্তু সাব-লিজ নিয়ে কাজটি করছেন ঠিকাদার মামুনুর রশিদ মামুন ও শফি উদ্দিন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শফি উদ্দিন বদলগাছী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক প্রকৌশলী। কিছুদিন আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় কাজে অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, রবিউল ইসলাম ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ভবন নির্মাণের শুরুতেই বালু ও ইটসহ সব নিম্নমানেরসামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন ঠিকাদার। প্রতিবাদ করতে চাইলে তাদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
তারা বলেন, ‘দোতলার ছাদ ঢালাইয়ে জন্য তিন নম্বর ইট নিয়ে আসায় আমরা খোয়া করতে নিষেধ করেছিলাম। রড না বেঁধে ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ছাদ ঢালাই দেয়া হচ্ছিল। পরে আমরা বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিই। নিম্নমানের কাজ হলে ভবন অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ছোট শিশুদের বিপদ হতে পারে।’
তারা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদাররা এমন অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন। এ বিদ্যালয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। আমরা জেনেশুনে তাদের মৃত্যু ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। নিম্নমানের কাজ আমরা চাই না। আমাদের দাবি, কাজ যেন সঠিক ও ভালো মানের হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিম্নমানের ইট নিয়ে আসার পর তাদের খোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ওই ইটের খোয়া করা হয়। ঢালাই দেয়ার আগের দিন ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পারিবারিক কারণে ঢালাইয়ের দিন সঠিক সময়ে আসতে পারিনি। পরে এসে দেখি রডগুলো না বেঁধে এবং নিম্নমানের খোয়া দিয়েই ঢালাই দেয়া শুরু করে। ঠিকাদারদের বলা হলেও কর্ণপাত করছিল না। পরে স্থানীয়রা এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ পুরোপুরি সঠিকভাবে হচ্ছিল না।’
এ ব্যাপারে সাব-ঠিকাদার শফি উদ্দিন বলেন, ‘আমি সেখানে কাজের দেখভাল করি। কোনো ধরনের নিম্নমানের কাজ হয়নি। প্রায় ৫০০ ইট খারাপ ছিল। ম্যানেজারকে সেগুলো ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ম্যানেজার ইটগুলো ভেঙে ফেলেছেন। এজন্য তাকে বকাবকিও করা হয়েছে। ছাদের ঢালাই শুরু হলেও কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। খারাপ খোয়াগুলো সরিয়ে নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘খোয়াগুলো অপসারণ করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তবে নিম্নমানের কাজে সহযোগিতা করতে অফিসের কোনো যোগসাজশ নাই।’