নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন তার ভাই নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস।
তার ভাষ্য, অস্ত্রধারীদের ছবি তোলায় তার ভাইকে নিশানা করে গুলি ছোড়া হয়েছে সংঘর্ষ থেকে।
১৯ ফেব্রুয়ারি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংর্ঘের সময় গুলিবিদ্ধ হন দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ও বার্তা বাজার ডটকমের নোয়াখালীর প্রতিনিধি মুজাক্কির। গুরুত্বর আহত মুজাক্কিরকে ঢাকায় আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
নুর উদ্দিন বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের ছবি তোলায় সেই চিহ্ন মুছতে ইচ্ছাকৃতভাবে মুজাক্কিরকে গুলি করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কেননা মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তার মোবাইল ও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে গোলাগুলির সময় মুজাক্কির অস্ত্রধারীদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন। সেই বিষয়টি টের পেয়ে অস্ত্রধারীদের র্টাগেট হন মুজাক্কির।’
নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস জানান, তাই ভাইয়ের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক জানিয়েছেন শরীর শটগানের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শরীরে গুলির ৬২টি স্প্রিন্টারের আঘাত ছিল। ঘটনাটি পরিকল্পিত না হলে মুজাক্কিরের শরীরে এতগুলো গুলি ঢুকতো না বলে দাবি তার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মুজাক্কিরের ফেসবুক আইডি থেকে অনেক পোস্ট ডিলিট হয়ে গেছে। গোলাগুলির ঘটনার পর তার যে মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই মোবাইলেই মুজাক্কির ফেসবুক ব্যবহার করতো। এতে তার পেশাগত অবস্থানের অনেক কিছুই অস্পষ্ট হয়ে যাবে।’
গুলিতে নিহত মুজাক্কিরের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা হয়নি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জায়েদুল হক রনি বলেন, ‘মুজাক্কিরের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা মঙ্গলবার অভিযোগ নিয়ে থানায় আসবেন।’
মামলা বিষয়ে নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস বলেন, ‘মামলার বিষয়ে সোববার আমার ছোট ভাই ফখরুদ্দিন থানায় যায়, ওসি সাহেব থানায় ছিলেন না। বসুরহাটে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় তিনি ওই দিকে ব্যস্ত আছেন বলেন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে আমাদের থানায় যাওয়ার জন্য ওসি সাহেব বলেছেন।’
সাংবাদিক মুজাক্কিরের রক্তাক্ত অবস্থার ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উপজেলার চাপরাশিরহাটে গুলিবিদ্ধ মুজাক্কিরের বাঁচার আর্তনাদ। রক্তাক্ত মুজাক্কির ‘ভাই, আমাকে বাঁচান, প্লিজ আমাকে বাঁচান’ বলে আকুতি জানাচ্ছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে গোলাগুলির সময় মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও সেটি। সেখানে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মোবাইলে আছে, আছে...।’
মানববন্ধন বিক্ষোভের ঘোষণা
ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরও কোনো মামলা ও আসামি চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা।
বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহাসচিব মনিরুজ্জামান চৌধুরী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কোন দেশে আছি জানি না, যে দেশে সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয় না। যে দেশে প্রকাশ্য গুলি করে মুজাক্কিরকে হত্যার করার ৭২ ঘণ্টা পরও মামলা হয় না। আমরা বিচার চাইবো কার কাছে?’
মুজাক্কির হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ রিপোটার্স ক্লাব নোয়াখালী জেলা শাখা ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবার এখনও কোনো মামলা না করায় তদন্ত শুরু করা যাচ্ছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’