দুই পক্ষের সমাবেশ ডাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীরের স্বাক্ষরিত এই আদেশ দেয়া হয়েছে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে।
ইউএনও জানান, সোমবার একই স্থানে কোম্পানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও বসুরহাটের পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সমাবেশ ডাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রশাসনের এই ঘোষণার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ জানান কাদের মির্জা।
তিনি বলেন, ইউএনও তার নির্ধারিত শোকসভা, প্রতিবাদ সভা ও মিলাদ-মাহফিল বানচালের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি তার নেতা-কর্মীদের যার যার অবস্থানে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল সোমবার দুপুরে বসুরহাট বাজারের রুপালী চত্বরে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। একই স্থানে দোয়া মাহফিলের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশ বন্ধে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এলাকায় সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুপালী চত্বরে কাদের মির্জার সমর্থকরা জড়ো হতে থাকলে পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়। দুপুর পর্যন্ত পৌর এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে।
এই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে অনেক দিন ধরেই। এর মধ্যে গেল শুক্রবার উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
বসুরহাটে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। ছবি: নিউজবাংলা
ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নোয়াখালীর স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বসুরহাটের মেয়র কাদের মির্জার আপত্তিকর নানা মন্তব্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল নোয়াখালীর রাজনীতি অঙ্গন।
গেল বৃহস্পতিবার কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এরপর ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া শুরু করেন মিজানুর রহমান। এর জেরে গেল শুক্রবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশীরহাট বাজারে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। গুলিতে তার মুখের নিচের অংশ এবং গলা ঝাঁজরা হয়ে যায়।
ওই দিন রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় মুজাক্কিরকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ও বার্তা বাজার ডটকমের নোয়াখালী প্রতিনিধি ছিলেন।