রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদ পড়ারা। তাদের দাবি, যাচাই প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে বাছাই কমিটি বলছে, নিয়ম মেনেই তালিকা করা হয়েছে।
তদন্তের পর রাজশাহী মহানগর বাছাই কমিটি যে প্রতিবেদন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) কাছে পাঠিয়েছে তা বাতিলের দাবি করা হয়েছে। বাতিল না করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আগের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা।
নতুন যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে রাজশাহী মহানগরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে ভাতা পান এমন ১২৬ জন তাদের গেজেটে নিয়মিত রাখার সুপারিশ পাননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইসংক্রান্ত রাজশাহী মহানগর কমিটি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেখানে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নির্দেশনায় কমিটি ১৬০ জনকে যাচাই-বাছাই করেছে। এর মধ্যে ৩৪ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ৮৪ জনের আবেদন সরাসরি নামঞ্জুর হয়েছে। ২৬ জন গেজেট নিয়মিত করার আবেদন না করায় তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়নি। এ ছাড়া আটজনের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত সিদ্ধান্ত এসেছে বলে কমিটি উল্লেখ করেছে।
এর বাইরে আরও আটজনের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই করে জামুকাকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে মহানগর কমিটি। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে গত মঙ্গলবার।
যারা সুপারিশ পাননি তারা প্রতিবেদনটি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
শনিবার নগরীর কাশিয়াডাঙ্গায় রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তালিকায় বঞ্চিতরা। তারা পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি প্রকাশ্যে সাক্ষ্য নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্যসচিব ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস মনিরুল ইসলাম।
সুপারিশ না পাওয়া ব্যক্তিরা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
সুপারিশ না পাওয়াদের এক জন আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনজন সহযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু কমিটি প্রথমে আমার কথা শুনেছে, এরপর এক জন এক জন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে। ভেতরে কী হয়েছে আমরা কেউ জানি না। অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের কোথাও নেই যে এভাবে আলাদা আলাদা সাক্ষ্য হবে।
‘যিনি অভিযুক্ত তার সামনেই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। এটাই আইন। যাচাই-বাছাইকালে এই নিয়ম মানা হয়নি। তাই আমরা প্রকাশ্যে সবার সামনে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের দাবি জানাচ্ছি।’
যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রজব আলীর বাবার নাম। সংবাদ সম্মেলনে রজব আলী বলেন, ‘জেনারেল ওসমানী আমার বাবাকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল থেকে রিলিজ লেটার দেয়া হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য তার নিজের সার্টিফিকেটের সঙ্গে এসব মিলিয়ে দেখে আমাকে বলেছেন, সব সঠিক আছে। তারপরও আমার বাবার গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পুনরায় যাচাই-বাছাই চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যরাও এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রতিবেদন বাতিল করা না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহানগর কমিটির সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণক প্রয়োজন। সঙ্গে প্রয়োজন জামুকার সুপারিশ। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ১৬০ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সুপারিশ ছাড়া তারা গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন। সে কারণে তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়।
‘জামুকার নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করেছি। জামুকা যেভাবে বলেছে সেভাবেই করা হয়েছে। সুপারিশ না পাওয়া ব্যক্তিরা যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার ডা. আবদুল মান্নান, রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল আজিজ মাস্টার, এফএ ফাউন্ডেশনের মহানগর সভাপতি আলতাফ হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।