রাতে খেয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে শুয়ে পড়েন সালেহা বেগম। সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভাঙে তার। দেখেন ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। ধোঁয়ায় বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস।
ঘুমিয়ে থাকা সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে দুই সন্তানকে বের করে আনেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে ছোট মেয়েটি। তাকে বাঁচাতে আবারও ঘরে ঢোকেন সালেহা। কিন্তু এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ভেলানগর গ্রামে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় সালেহা বেগম ও তার মেয়ে ফারজানা আক্তারের।
সালেহা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ আলী কুয়েত প্রবাসী। বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তার বিবাহিত; থাকেন স্বামীর বাড়িতে। দ্বিতীয় মেয়ে মাহফুজা আক্তার পড়ে নবম শ্রেণিতে। সেজ মেয়ে ফারজানা আক্তার ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তারপরের ছেলে সাত বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসাইন পড়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা হোস্টেলেই থাকে সে। আর সবশেষ ছেলে আরাফাত হোসেনের বয়স চার বছর।
ঘটনার সময় টিনের ওই বাড়ির একটি কক্ষে ছিলেন সালেহার মা ফজিলাতুন্নেছা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাপরে আগুনডা যহন লাগছে তহন আমি চোহেমুহে কিছু দেহি নাই। আমার মাইয়াডা আমার নাতিনডারে আগুন থাইক্কা বাঁচাইত্ত গিয়া আগুনের মইধ্যে লাফ দিল। আমার মাইয়া মইরা গেল রে। নাতিনডাও নাই, মাইয়াডাও নাই। আল্লাহ এইডা কী করল।’
মা, বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে হোসাইন ও আরাফাত। একটু পর পরই মাকে দেখার জন্য চিৎকার করে কাঁদছে তারা। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে মাহফুজা।
প্রতিবেশীরা জানান, সবই ঠিক ছিল। মঙ্গলবার সালেহা ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকাও তুলে আনেন। কিন্তু সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল।
দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এলেও স্থানীয় লোকজন আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।