হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের ট্রাফিক আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চার দিনের এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজশে প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীব এ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ প্রকৃত চালকদের।
প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীব প্রকৃত চালকদের বাদ দিয়ে নিজের বোনের স্বামী, ভাগনে, মামা, মামাতো ভাইসহ স্বজন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী পৌর যুবলীগের সভাপতি ও তার দুই ছেলে, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিসহ ৬০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ কর্মশালায় দুই ধাপে চার দিনে ৬০ জন অটোরিকশা চালককে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা। এ জন্য ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক চালককে ১ হাজার ১০০ টাকা করে দেয়ার কথা।
দুই ধাপে ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ৩০ জন এবং ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু চার দিনের বদলে মাত্র এক দিন ৯ ফেব্রুয়ারি প্রশিক্ষণের নামে ৫৬ জনকে টাকা দেয়া হয়।
তালিকার একটি অনুলিপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, প্রথম ধাপে প্রশিক্ষণের তালিকায় ২৬ নম্বরে রয়েছে পৌর যুবলীগ সভাপতি মন্টু মিয়ার নাম। আর তার ছেলে লিমন মিয়া ২৪ নম্বরে ও ইমন আহমেদ রয়েছেন ৬ নম্বরে। মানসিক প্রতিবন্ধী মাখন মিয়া রয়েছেন তালিকার ১১ নম্বরে।
প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণের তালিকার ৩ নম্বরে থাকা এরশাদ মিয়া কৃষক। তিনি জানান, প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন না। কোনো টাকাও পাননি।
প্রকৃত চালকদের প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণে সুযোগ না দেয়ার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শরিফ চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এ উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের একটিই সংগঠন। এর আওতায় রয়েছেন ২০০ জন শ্রমিক। প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তার কোনো শ্রমিকও তাতে অংশ নেননি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু অটোরিকশা শ্রমিকদের নিয়ে এই কর্মশালা, অথচ আমি বিষয়টি জানিই না। তাহলে কি হাওয়ার মধ্যে কর্মশালা হয়ে গেল?’
কর্মশালার সমন্বয়কারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কর্মশালাটি গত অর্থবছরের। যে কারণে দ্রুত শেষ করতে গিয়ে আমরা চার দিনের কর্মশালা এক দিনেই শেষ করেছি। এ বিষয়ে ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) স্যার অবগত আছেন।
‘তবে চালকদের তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীব। তালিকা তৈরিতে আমার কোনো হাত নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫৬ জনকে টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি চার জনের টাকা রয়ে গেছে। তবে টাকা দেয়ার সময় কারও জাতীয় পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখা হয়নি। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর আস্থা রেখে টাকা দেন তারা। তবে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তারা জানতে পারেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের লোকজনই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীবের মোবাইলে কল করলে তিনি বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলি।’ এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল ধরেননি।
ইউএনও মতিউর রহমান খাঁন বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে এসেছে। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’